বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে এসে তিনি এখন পুরোদস্তুর কৃষক

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার আজাদ মিয়া (৩০) ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্নের পর উচ্চশিক্ষা নিতে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেন। উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরলেও চাকরির পেছনে ছোটেননি। শিক্ষিত ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন কৃষিকাজ। নিজ বাড়িতে দেড় একর জমিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ করেন।পাশাপাশি চলে নানা ধরনের পাখি পালন। এতেই তাঁদের আয় বছরে প্রায় আট লাখ টাকা। বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে পুরোদস্তুর কৃষক বনে যাওয়ায় তাঁকে দেখে গ্রামের অনেকে এখন কৃষিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

আজাদ মিয়া বারহাট্টা উপজেলার গরমা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আকমল হোসেনের ছেলে। তিনি মালয়েশিয়ার লিমকক উইং অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন।এলাকাবাসী ও আজাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজাদ রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে  মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরে আসেন। এরপর চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ গ্রামে ‘খোরাক অ্যাগ্রো ফার্ম’ নামের একটি কৃষি খামার গড়ে তোলেন তিনি।

পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা পাস করা ছোট ভাই সাদ ইবনে হোসাইনকে (২৩) নিয়ে সেখানে বিদেশি সবজির চাষাবাদ শুরু করেন। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পালন করেন। এতে খরচ বাদে বছরে তাঁর আয় হচ্ছে প্রায় আট লাখ টাকা।

আজাদ মিয়া বলেন, তাঁদের ফার্মে চাষ হচ্ছে বকচয়, চই, কিং চই, চায়নিজ বাঁধাকপি, জাপানি শসা, অ্যারাবিয়ান শসা, রঙিন ফুলকপি, ভিয়েতনামি লাল কাঁঠাল, চেরি টমেটো, বিটরুট, সাদা করলা, ক্যাপসিকামসহ নানা জাতের বিদেশি সবজি। নিজেদের দেড় একর জমিতে বিদেশি সবজির পাশাপাশি তাঁরা প্রায় সব ধরনের দেশি সবজি চাষ করেন। খামারের ভেতর তাঁরা তৈরি করেছেন একটি গ্রিনহাউস। এতে আরও অনেক বিদেশি সবজি চাষ করার ইচ্ছা আছে তাঁর।

আজাদ মিয়া আরও বলেন, ‘এ মৌসুমে ৪০ শতাংশ জায়গায় বিদেশি সবজিসহ দেশি পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মৌসুম শেষে খরচ বাদে চার লাখ টাকার মতো লাভ থাকবে।’আজাদের খামারে বিভিন্ন ধরনের বিদেশি সবজির চাষ করা হয়। এতে বছরে তাঁর আয় প্রায় আট লাখ টাকা।

সম্প্রতি নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার গড়মা গ্রামেআজাদের দেখাদেখি গ্রামের অনেকে কৃষিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। গরমা গ্রামের বাসিন্দা সবুজ মিয়া বলেন, ‘ভোর থেকে খামারের কাজ শুরু করেন আজাদ ও সাদ। তাঁদের দেখে গ্রামের অনেক বেকার যুবক কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমিও খেতে কিছু বিদেশি সবজি চাষ করছি।’

শুধু দেশি-বিদেশি সবজি নয়, আজাদ ও সাদ বাণিজ্যিকভাবে পাখি লালন-পালন করেন। খামারের এক প্রান্তে তাঁরা গড়ে তুলেছেন পাখি পালনের শেড। সেখানে বিশেষভাবে বিভিন্ন জাতের পাখি ও খরগোশ রাখা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে লাভ বার্ড, ককাটেল, বাজিগর, প্রিন্স, বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘু ও বিদেশি মোরগ আছে।

পাখিগুলোর কোনো কোনোটির প্রতি জোড়ার দাম ১০ হাজার টাকা বা তারও বেশি। নিজেদের দোকান থেকে স্থানীয়ভাবে এগুলো বিক্রি করা হয়। তবে বেশির ভাগ পাখি বিক্রি হয় অনলাইনে। এখান থেকেও প্রতি মাসে ভালো অঙ্কের টাকা আয় করেন আজাদ।

বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, আজাদ ও সাদ দুই ভাই উচ্চশিক্ষিত হয়েও কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেছেন, এটি খুবই ইতিবাচক। শিক্ষিতরা কৃষিকাজে আগ্রহী হলে কৃষিতে বিপ্লব হবে। তিনি বলেন, খোরাক অ্যাগ্রো ফার্মকে কৃষি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো

Check Also

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা ও সাধারণ বৃত্তি বন্টনের আদেশ

স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে  ৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাজস্ব খাতভূক্ত মেধা ও সাধারণ বৃত্তির …

কানাডার ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অপার সম্ভাবনাময় একটি দেশ হচ্ছে কানাডা।আবাসন সুবিধা, শিক্ষার্থীদের আয়ের পথ, শিক্ষার মান, …

আপনার মতামত জানান