ঢাকা সিটি করপোরেশনে ৮টি পদে বদলির জন্য ১ হাজার ৪৬৮টি আবেদন

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে চাকরি করে ঢাকা বদলি হওয়া যেন হাতে সোনার হরিণ পাওয়া। এই সোনার হরিণ পেতে অনলাইনে আবেদন করেছেন কয়েক হাজার শিক্ষক। দেশের ১২ সিটি করপোরেশনে বদলি হয়ে যাওয়ার জন্য ৬ হাজারের বেশি আবেদন করেছেন। যদিও বদলিযোগ্য শূন্য পদের সংখ্যা নগণ্য।

সেলিম উদ্দিন ঢাকায় থাকলেও তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসাবে ঢাকার বাইরে চাকরি করছেন। কিন্তু নানা তদবির করেও ঢাকায় আসতে পারেননি। ইতিমধ্যে কেউ কেউ তদবির করে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলছেন, এবার বদলি হয়ে না আসতে পারলে তার স্ত্রীর চাকরিটাই ছেড়ে দিতে হবে। গত তিন বছরে কয়েক শ বার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়েছি। কোনো লাভ হয়নি। অথচ অনেকে বিভিন্ন তদবির করে বদলি হয়ে ঢাকা এসেছেন।

সেলিম উদ্দিনের মতো ১ হাজার ৪৬৮ জন শিক্ষক আবেদন করেছেন ঢাকায় বদলির জন্য। যদিও ঢাকা বদলির যোগ্য শূন্য পদের সংখ্যা মাত্র আটটি।তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ৩৪২টি সরকারি স্কুলে শূন্য পদের সংখ্যা ৮২টি। এর মধ্যে ১০ শতাংশ পদ বদলির মাধ্যমে পূরণ করা যাবে। সে অনুযায়ী বদলি হয়ে ঢাকায় আসার সুযোগ রয়েছে মাত্র আট জনের।

গতকালও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়ে বিভিন্ন স্তরের সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাদের ভিড় দেখা গেছে। বদলির আবেদন যারা করেছেন তারা খোঁজ খবর নিতে এসেছেন। কেউ কেউ এসেছেন বদলির তদ্বিরের জন্য। কিন্তু অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, অনলাইনে বদলি হবে, কারো এখানে কিছু করার সুযোগ নেই।

গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, সিটি করপোরেশনে বদলি হওয়ার জন্য ৬ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রী-এমপিদের ডিও (আধা সরকারি পত্র) জমা হয়েছে ১৭৩টি।

গতকাল খুলনা মহানগরীতে বদলি হয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় এক সংসদ সদস্যের ডিও নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের কক্ষে উপস্থিত হন সংশ্লিষ্ট এক শিক্ষকের বড় ভাই। সচিব তাকে বলেন, বদলি হওয়ার জন্য শিক্ষকদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নম্বর দেওয়া হবে। যারা বেশি নম্বর পাবে তারা বদলি হতে পারবেন। ডিওর জন্য কোনো নম্বর নেই। সফটওয়্যারে অটোমেটিক বদলির সুযোগ পাওয়াদের তালিকা প্রকাশ পাবে।

অন্য জায়গা থেকে সিটি করপোরেশনের ভেতরে বা আন্তঃসিটি করপোরেশনে বদলি গত ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয়। চলে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। ৭ ও ৮ এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিস প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে। ৯ এপ্রিল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও ১০ এপ্রিল বিভাগীয় উপপরিচালক প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করার কথা। আগামীকাল ১২ এপ্রিল বদলিযোগ্য প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে। অন্যদিকে গতকাল বদলির আবেদন সংক্রান্ত সার্ভার ডাউন থাকার কারণে কোনো কাজ করতে পারেননি বিভাগীয় উপ-পরিচালকরা।

সিটি করপোরেশনে বদলির জন্য পাঁচটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত স্বামী/স্ত্রীর কর্মস্থল, চাকরির আগে বিয়ে হয়ে থাকলে স্বামী/স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানা, অসুস্থতা, চাকরিতে জ্যেষ্ঠতা ও বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত শিক্ষকের পিতা বা বর্তমান স্থায়ী ঠিকানায় বদলির ওপর নম্বর দেওয়া হবে। যে সর্বোচ্চ নম্বর পাবেন সে অনুযায়ী বদলির সুযোগ পাবেন।

তবে  অনলাইনে ভর্তির আগে প্রায় শতাধিক প্রার্থী বিভিন্ন স্থানে বদলি হয়েছেন। অন্য সব বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হলেও এই আদেশগুলো ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হয়েছেন তারা সশরীরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়ে আদেশপত্র নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীতে ১৬০টি শূন্য পদ থাকলেও এক মাস পরে এই শূন্য পদ গিয়ে দাঁড়ায় ৮২-তে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের অভিযোগ, ৭৮ পদে গোপন আদেশে বদলি করা হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সূত্রঃইত্তেফাক

Check Also

মরার জন্য অসুস্থ মাকে নির্জন বিলে রেখে পালিয়ে গেল সন্তান

মরার জন্য অসুস্থ মাকে নির্জন বিলে রেখে পালিয়ে গেল সন্তান

কঙ্কাল সার শরীর, ডান চোখের উপরে মাথার একাংশ সহ বড় টিউমার। লালচে হয়ে যাওয়া মাংসপিন্ডের …

শিক্ষার্থী

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ধরণের ক্লাব গঠন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ধরণের ক্লাব গঠন বাধ্যতামূলক হচ্ছে। বিজ্ঞান চর্চা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও সংস্কৃতি চর্চার …

আপনার মতামত জানান