প্রথমে আপনাদের সাথে একটা গল্প শেয়ার করি।আমাদের দেশের পিটিআইয়ের এক ইন্সট্রাক্টর জাপানে গেছেন প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে।বাংলাদেশে পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের কাজ হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কীভাবে সাবলীল ও কার্যকরভাবে পাঠদান করবেন সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা।জাপানের সেই প্রশিক্ষণে যারা অংশ নিতে গেছিলেন তাদের সবাই প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তো সেই ইন্সট্রাক্টর মহোদয় যখন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন তখন প্রশিক্ষণের প্রথমদিনেই প্রশিক্ষক মহোদয় সকল প্রশিক্ষণার্থীদের কাছে জানতে চান যে উনারা কত বছর ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে বলছেন?
একে একে সকল প্রশিক্ষণার্থী প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে তাদের চাকরির বয়স ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন।বাংলাদেশের প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে ঐ ইন্সট্রাক্টর মহোদয়ের উত্তরের পালা যখন এলো,ইন্সট্রাক্টর মহোদয় তখন জানালেন যে তিনি কখনোই প্রাথমিক শিক্ষক ছিলেন না।তিনি সরাসরি ইন্সট্রাক্টর হিসেবে যোগদান করেছেন।
একথা শুনে জাপানের প্রশিক্ষক আশ্চর্য হয়ে বললেন আপনি কোনদিন প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করেননি অথচ আপনি কীভাবে প্রাথমিকের কোমলমতী শিক্ষার্থীদের কার্যকরভাবে পাঠদান করা যায় সে বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।এটা আপনাদের কী ধরণের সিস্টেম?
আরো পড়ুন
ডিসেম্বরের আগে বিদ্যালয় খোলা সম্ভব না হলে সবাইকে অটোপাস-ডিজি
ডিপ্লোমাধারী প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দাবী নয় বরং অধিকার
শিক্ষকতা এত সম্মানীয় পেশা হলে মেধাবী প্রাথমিক শিক্ষকরা পেশা ছাড়ছেন কেন ?
জাপানে প্রাথমিক শিক্ষায় যত কর্মকর্তা আছেন তাদের সবাই প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং তাদের শিক্ষকদের ও কর্মকর্তাদের মর্যাদার মধ্যে কোন প্রভেদ নেই। কিন্তু আশ্চর্যজনক সিস্টেম সব আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায়।
ছোট ছোট কোমলমতী প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বাস্তবে পাঠদান করা আর প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষকদের পাঠদান করানোর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে তা মনে হয় আমাদের নীতিনির্ধারক মহোদয়গণের জানা নেই।ছোট ও কোমলমতী শিশুদের পাঠদান যারা কোনদিন করেননি তারা যদি প্রাথমিক শিক্ষকদের একাডেমিক সুপারভাইজার হন তাহলে সেটা যে কত ফলপ্রসু হবে তা সবাই ভালোভাবে বুঝেন।
আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রথম তত্তাবধানকারী কর্মকর্তা হচ্ছেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার যিনি কোনদিন প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকেননি,প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ১টি ক্লাসও নেননি অথচ তিনি প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রাথমিক ক্লাস তত্তাবধানকারী কর্মকর্তা।
একজন শিক্ষকের পাঠদানের ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় অসঙ্গতি রয়েছে,কোথায় সাবলীল পাঠদান হয়েছে তা একজন শিক্ষক ছাড়া বাইরের কেউ কখনো বুঝতে পারবেন না।সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে যদি মহাপরিচালক পর্যন্ত সকল পদে যদি শিক্ষকবৃন্দ দায়িত্বে থাকতেন তাহলে উনারা সহজেই প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের মূল সমস্যা নির্ণয় ও তার সমাধান করতে পারতেন।এই সিস্টেমের প্রচলন না থাকায় আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষার মানসম্মত উন্নয়ন হচ্ছেনা।
আমাদের সম্মানিত নীতিনির্ধারক মহোদয়গণতো প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য কত কিছু করছেন কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষার আসল গলদ এই বিষয়টির সমাধানে কেন জাপানকে অনুসরণ করে জাপানের ন্যায় আমাদের দেশে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার থেকে শুরু করে মহাপরিচালক পর্যন্ত সকল পদে ধাপে ধাপে প্রাথমিক শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি দিচ্ছেন না?
লেখক-মাহফিজুর রহমান মামুন,শিক্ষক ও কলামিস্ট