মায়েরা তুলেনি উপবৃত্তির এমন ১০০ কোটি টাকা মন্ত্রণালয় ফেরত নিতে চাচ্ছেন

প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প ৩য় পর্যায়ের শুরু থেকে অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক (মা) টাকা তুলেননি, ফলে গত তিন অর্থবছরে এই টাকা জমে প্রায় ১০০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে । প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় চাচ্ছেন এই টাকা ফেরত নিতে।এজন্য টাকা ফেরত চেয়ে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে চিঠি দিয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে এই টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছেন ১০ বছরের আগে  এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া যায়না। তবে  অভিভাবক মায়েরা কেন টাকা তুলছেন না, কেউই তা খতিয়ে দেখতেছেনা।

এ বিষয়ে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব আকরাম-আল-হোসেন মহোদয়  বলেন, ‘যেসব অভিভাবক (মা) অনেকদিন ধরে উপবৃত্তির টাকা তুলছেন না, তাঁদের আমরা মেসেজ পাঠিয়েছি কিন্তু তার পরও তারা টাকা তোলেননি। এজন্য আমরা জমে থাকা এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে চেয়েছি।’

অভিভাবক মায়েরা কেন টাকা তুলছেন না এ সম্পর্কে  জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে , সচ্ছল পরিবারের মায়েরা এই টাকা তোলেননি।’

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে নিয়মিত উপবৃত্তি দেওয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প ৩য় পর্যায়ের আওতায় এই উপবৃত্তি দেওয়া হয়।প্রতি ৩ মাসে এক কিস্তি হিসেবে বছরে ৪ কিস্তিতে উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইল ফোনে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়। কিন্তু অনেক অভিভাবক উপবৃত্তির এই টাকা তুলছেন না এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিভাবকদের (মা) ‘শিওর ক্যাশ’ অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছেন ।

প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ইউসুফ আলী গত ১৬জুন দেশের সব থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, ‘স্বল্পসংখ্যক অভিভাবকের মোবাইল অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন কিস্তিতে উপবৃত্তির অর্থ পাঠানো হলেও তা অলসভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো অর্থ তোলা হচ্ছে না। উল্লিখিত অ্যাকাউন্টগুলো প্রকৃত সুবিধাভোগী অভিভাবকদের নয় বলে মনে হয়। ২৫ জুনের মধ্যে এই টাকা উত্তোলনের প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। উল্লিখিত তারিখের পর অনুত্তোলিত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। এরপর অভিভাবক কর্তৃক অনুত্তোলিত অর্থের আর কোনো দাবিনামা গ্রহণ করা হবে না।

এ বিষয়ে উপবৃত্তি প্রকল্পের পরিচালক ইউসুফ আলী বলেন, ‘টাকাটা দীর্ঘদিন পড়ে আছে,কেউ তুলছেন না। অনেক অভিভাবক হয়তো এই নম্বরগুলো আর ব্যবহার করছেন না। আবার অনেক অভিভাবক এই টাকা তুলতে আগ্রহী নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম  বলেন মায়েরা কেন টাকা তুলছেন না, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দুই দফা চিঠি পাঠালেও ব্যাংক থেকে কোনো জবাব না পাওয়ায় বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবগত করেন । অর্থ মন্ত্রণালয়ও  তিন কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে অনুত্তোলিত এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দেয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অর্থ ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়  এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হলে দশ বছর অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এই টাকা অভিভাবক মায়েদের অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। আগামী দশ বছরের মধ্যে তারা টাকা না তুললে বাংলাদেশ ব্যাংক এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেবে।

তবে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা উচিত কারণ এমনও হতে পারে কোন কারণে অভিভাবকরা মেসেজ পাননি অথবা সংশ্লিষ্ট মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটরের যান্ত্রিক কোনো সমস্যা রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ  এইচ মনসুর কালের  বলেন, টাকাটা ব্যক্তিগত  অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ায় এই টাকা এখন সরকারের টাকা নয়।হতেপারে,অভিভাবকরা এই টাকা উনাদের নম্বরে সঞ্চয় করছেন। তবে যাই হোক ঘটনাটি  খতিয়ে দেখা দরকার।

আরো পড়ুন
প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের নিয়ে এত হইচই করা হয় কেন?
জেনে নিন ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন কোর্সের খুঁটিনাটি
ইউএনও অফিসের দারোয়ান-ড্রাইভারও প্রাথমিক শিক্ষকের চেয়ে বেশি বেতন পায়-অধ্যাপক কামরুল হাসান

Check Also

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

বিসিএসের প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে

‘বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে দেশের অন্যতম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর …

বই খুলে দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা,দুই কেন্দ্র সচিবসহ ৫ জন প্রত্যাহার

বই খুলে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজের দায়িত্বরত …

আপনার মতামত জানান