রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে অচল তবে রাকসু অচল থাকলেও থেমে নেই রাকসুর জন্য নির্ধারিত চাঁদা।শিক্ষার্থীদের রাকসুর জন্য প্রতিবছর ভর্তির সময় ১৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাকসু অচল থাকায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। যেখান থেকে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া না গেলেও চাঁদা দিতে হচ্ছে।
১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে ১ম রাকসু নির্বাচন হয়। ওই সময় এর নাম ছিল রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাসু)। আইয়ুব খানের শাসনামলে এর কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর ১৯৬২ সালে এটি যাত্রা শুরু করে রাকসু নামে। এখন পর্যন্ত ১৪ বার রাকসু নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয় রাকসুর ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের জন্য। ২০১৯ সালে রাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরব হলেও পরের বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ধামাচাপা পড়ে সেই আলোচনা।
রাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী তারিফ হাসান মেহেদী বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থী চায় রাকসু নির্বাচন হোক। রাকসু অচল থাকায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। যেখান থেকে আমরা কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছি না, সেখানে কেন আমাদের চাঁদা দিতে হচ্ছে!
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যম মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত। তার একটি হলো শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। সব থেকে দুর্বল মাধ্যম হলেও এখন পর্যন্ত এটি টিকে আছে। দ্বিতীয়টি হলো শ্রেণিকক্ষে শেখার বিষয়গুলো বাইরে প্রয়োগের জন্য টিএসসিসি।
আরো পড়ুন
৩৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মূল সনদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন
পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন হচ্ছে শিক্ষক হওয়া
জাবিতে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা,এবারো বিতর্কিত শিফট পদ্ধতিতে
কোন শিক্ষক তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না
আগামী রোববার জানানো হবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর তারিখ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত সাত কলেজে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশপ্রেম বা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির তৃতীয় মাধ্যমটি হলো রাকসু। এই তিনটি মিলে শিক্ষা পরিপূর্ণ হয়। সেদিক বিবেচনায় বলা যায়, শিক্ষার তিনটি চোখের মধ্যে বর্তমানে দুটিই অন্ধ হয়ে আছে।
দ্রুত রাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, রাকসু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে আমি মনে করি এটিই রাকসু নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময়।
ক্যাম্পাসে সহাবস্থান এবং শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে রাবি ছাত্রদল রাকসু নির্বাচন চায় জানিয়ে সংগঠনটির আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘আমরা যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশে রাকসু নির্বাচন চাই।’
গত বছর ডিসেম্বরে কমিটি ছাড়াই কোষাগারের অর্থ ব্যয় করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ক্রীড়া উৎসবের আয়োজন করে আলোচনায় আসে রাকসু। সে প্রসঙ্গে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাকসুর সভাপতির নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করে সেই উৎসবের আয়োজন করা হয়। সেখানে রাকসুর কোষাগার থেকে প্রায় ১২ লাখ ৮২ হাজার টাকার মতো ব্যয় করা হয়।
অচল রাকসুর নামে চাঁদা আদায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘বর্তমানে রাকসুর কোষাগারে মোটা অঙ্কের টাকা জমা আছে। রাকসু চালু হলে শিক্ষার্থীদের জন্যই এ টাকা কাজে লাগানো হবে।’
উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘আমি চাই রাকসুটা হোক। এমন একটি সংগঠন থাকলে প্রশাসনেরও সুবিধা হয়। শিক্ষার্থীরা যদি সংঘবদ্ধ হয়ে গুছিয়ে বলে যে, আমরা রাকসু চাই তাহলে আমাদের রাকসু দিতে তো কোনো অসুবিধা নেই।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন