১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১৬ সাল, পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিরল ও নির্মম ঘটনা ঘটে। এই দিনে পৃথিবীতে প্রথম কোনও হাতির ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দন্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
আজকে আমরা সেই কাহিনীই বিস্তারিত জানবো ।ঘটনাটি ঘটেছিল আমেরিকার টেনিস শহর, সেখানে একটি সার্কাস দলে কাজ করতো ম্যারি নামের একটি হাতি। সার্কাসে দুর্দান্ত সব কসরত করে মানুষকে অভিভূত করে রাখতো ম্যারি । মূলত ম্যারিকেই দেখতেই সার্কাসে অনেক বেশি ভীড় হতো । এই সার্কাস দলটির নাম ছিলো চার্লি স্পার্কস।
দলের মালিক হাতিদের পুরোনো মাহুতকে অপসারণ করে ,হাতিদের দেখাশুনা করা এবং হাতিদের সার্কাস দেখানোর জন্য একজন নতুন কর্মচারীকে নিয়োগ দেন ,যার নাম ছিল রেড এল্ড্রিক্সক।কিন্তু হাতিদের বিষয়ে রেড অতটা অভিজ্ঞ ছিলনা। তাছাড়া নতুন কর্মচারী হওয়ায় সে হাতিদের আচরণ, ইচ্ছে এসব ঠিকমত বুঝতে পারতোনা।
একদিন খেলা চলার সময় রেড ম্যারির উপরে বসে দর্শকদের সার্কাস দেখাচ্ছেন। সবকিছু ঠিকঠাক মতই চলছে ।ম্যারি দুই পা তুলে পেছন পায়ে ভর দিয়ে দর্শকদের দারুণভাবে মনোরঞ্জন করে যাচ্ছেন। কিন্তু মাহুত রেড অযথাই ম্যারির কানে লোহার শিক দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। এক সময় ম্যারির মেজাজ চড়ে যায় এবং সে রেডকে টেনে নিছে নামিয়ে পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলে।
ঘটনায় সমগ্র সার্কাস প্রাঙ্গণ এবং শহর জুড়ে ম্যারি বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠে। সবার এক দাবি,হত্যাকারী হাতিকে কঠিন সাঁজা দিতে হবে। তা না হলে আন্দোলন থামবেনা। একটি হাতি থেকে একজন মানুষের মূল্য অনেক বেশি।কেউই চার্লি স্পার্কস এর কোন শো দেখতে যাচ্ছিলনা। এক সময় সার্কাস দলটিই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
সার্কাস মালিক কোনভাবেই জনগণকে বুঝাতে পারছিলেন না যে রেড হত্যায় ম্যারির দোষ ছিল যতটা তার চেয়ে বেশি দোষ ছিল রেডের।সে ম্যারিকে রাগিয়ে দিতে কাজ করেছিল তাই ম্যারি রেগে যায়। ম্যারি একটি অবলা প্রাণী,তার দোষ নেই। কিন্তু মানুষ তা বুঝলোনা।শেষে বাধ্য হয়েই সার্কাস মালিক সিদ্ধান্ত নিলেন ম্যারিকে হত্যা করা হবে।কিন্তু কিভাবে?
বিশাল দেহী এশিয়ান এই হাতি এতই বড় ছিল যে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পন্থা নিয়েই সবাইকে অনেক ভাবতে হয় । শেষে সিদ্ধান্ত হয় ম্যারিকে ক্রেনে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়া হবে। তাই বিশাল ক্রেন নিয়ে আসা হল। শহরের বিক্ষুব্ধ সব নাগরিককে দাওয়াত দেয়া হলো। সবাই মেতে উঠলো ভয়ঙ্কর এক হত্যা প্রত্যক্ষ করতে।
সবার চোখে তখন প্রতিশোধের ক্রোধ টগবগ করছে।ম্যারিকে অবশেষে বিশাল একচেইন দিয়ে ক্রেনের হুকে বাঁধা হলো।ক্রেন যেই চালু করা হল মুহূর্তে ম্যারিকে এক টানে ২০ ফুট উপরে তুলে নিল। ম্যারি অনেক স্বাস্থ্যবান হওয়াতে ক্রেনের চেইন ছিঁড়ে সে ২০ ফুট উপর থেকে পড়ে যায় ।
এসময় ম্যারির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায়,পা ভেঙ্গে যায়, গলা কেটে প্রচুর রক্ত ঝরতে থাকে।কিন্তু মানুষগুলোর! কারো মন গলেনা, আবার ম্যারিকে ক্রেনের চেইনের সাথে বাঁধা হলো। থেমে গেলে চলবেনা, শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে।
পরের চেষ্টায় ম্যারি ফাঁসির চেইনে ছটফট করতে করতে মারা যায়। আসলে ম্যারি মারা যায়নি, ওইদিন চেইনে ঝুলে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল মানুষের মানবতাকে। আমরা আশরাফুল মাকলুকাত, সৃষ্টির সেরা জীব কিন্ত আমরা মাঝে মাঝে এমন কাজ করি যা আমাদেরকে পৃথিবীর নিকৃষ্ট প্রাণি থেকেও নিচে নামিয়ে দেয়।
(সংগৃহীত ও পরিমার্জিত)