প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আসন্ন প্রকল্পে যেসব সুবিধা থাকবে

গত ১৭ মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া করোনার কারণে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে এবং এসব দরিদ্র মানষের সন্তানরা  শিক্ষা কার্যক্রম থেকে  ঝরে পড়তেছে। এসব পরিবারের শিশুরা আয় করার জন্য বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত হচ্ছে।। এতে বাল্যবিয়ে, বিশেষ করে মেয়েদের বেড়ে যাবে । বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরে স্কুল ছাড়ার হার ৩৭ শতাংশ এবং প্রাথমিক স্তরে ১৮ শতাংশ।

সরকারও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া নিয়ে  চিন্তিত। তাই করোনা পরবর্তীকালে  শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা  এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে নানামুখী কর্মসূচি  নিচ্ছে সরকারের। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদেরঝরে পড়ার হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তাই করোনা পরবর্তীকালে  শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালু এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এজন্য অতিরিক্ত  অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।

এজন্য পাঁচ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প নিচ্ছে সরকার। এ কর্মসূচির মাধ্যমে দুপুরের খাবার সরবরাহ করবে, প্রতিটি স্কুলে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করবে এবং শিক্ষার প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।ভবিষ্যতে লেখাপড়ার ক্ষতি এড়াতে সারাবছর টেলিভিশন, রেডিও ও ইন্টারনেটে পাঠদান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক এবং বেসিন স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ের আরও একটি পরিকল্পনা রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা যাচাইয়ের উপকরণ সরবরাহ করা হবে। শিক্ষকসংকট নিরসন করার জন্য ৪০ হাজার সহকারী  শিক্ষক নিয়োগ হবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তাছাড়া গরিব শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার জন্য শিক্ষাঋণ দেয়ার কথাও ভাবতেছে সরকার।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ জানিয়েছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে দুপুরের খাবার সরবরাহের পর শিক্ষার্থী ঝরে পড়া হার অনেক হ্রাস পেয়েছে। ফলপ্রসূ হওয়ায় প্রকল্পটি পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী করার পরিকল্পনা নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, প্রকল্পটি অবশ্যই ঝরে পড়া হ্রাস করা ও মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। প্রকল্পটি প্রায় চূড়ান্ত হলেও অনুমোদন নিতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে ।

তিনি জানান, আরেকটি প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদানের জন্য এবং ভবিষ্যতে করোনার মতো যেকোন বিপর্যয়ের সময় লেখাপড়া ক্ষতি এড়াতে সারাবছর টেলিভিশন, রেডিও ও ইন্টারনেটে পাঠদান অব্যাহত রাখা হবে।প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক এবং বেসিন স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ের আরও একটি পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা যাচাই করার জন্য সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হবে। শিক্ষকস্বল্পতার নিরসনে আরও ৪০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনাব  সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস সংকট দীর্ঘকাল চলতে থাকলে ড্রপ আউট হার বর্তমান স্তর থেকে কমপক্ষে ৭০ শতাংশে উন্নীত হবে।

তিনি বলেন, আমরা সর্বদা শিক্ষা খাতের প্রতি সরকারের অবহেলা দেখি কারণ শিক্ষাখাতের জন্য যে বাজেট করা হয়েছিল তা সন্তোষজনক নয়। এ খাতকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিয়ে সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা অসম্ভব। আমি সরকারকে শিক্ষক ও এনজিওর সহায়তায় দরিদ্র ও করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের চিহ্নিত করার জন্য একটি ডাটাবেস প্রস্তুত করতে বলেছি। তবে সরকার এখনো এ জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

গরিব শিক্ষার্থীদেরর জন্য প্রতি মাসে ৫শ টাকা এবং শিক্ষকদের জন্য উদ্দীপনামূলক প্যাকেজ বরাদ্দের আহ্বান জানান বিশিষ্ট এই  শিক্ষাবিদ।

তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, মহামারীতে শিক্ষার একাডেমিক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিকল্প টেকসই কর্মসূচি নেওয়া দরকার। এ জন্য অন্তত একটি দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কর্মসূচিতে পাঠ্যক্রম, পরীক্ষা ও ছুটি সমন্বয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তা করার পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার জন্য সরকার কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে যাতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কোনো শিক্ষার্থী ঝরে না পড়ে,তবে সরকার তা করেনি।

উল্লেখ্য, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত  ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এই বন্ধ থাকবে । ইতোমধ্যে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিওতে পাঠদান সম্প্রচার করছে শিক্ষা প্রশাসন।

আরো পড়ুন
টাকা খরচ করে আর নয় প্রাইভেট-কোচিং,এবার ইংরেজিতে দক্ষ হবেন একটি মোবাইল আ্যাপ দিয়ে
প্রাক-প্রাথমিক বনাম শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ সার্কুলার,জেনে নেই উভয়ের খুঁটিনাটি
শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা-অধ্যাপক ড.জাফর ইকবাল

Check Also

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

বিসিএসের প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে

‘বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে দেশের অন্যতম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর …

বই খুলে দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা,দুই কেন্দ্র সচিবসহ ৫ জন প্রত্যাহার

বই খুলে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজের দায়িত্বরত …

আপনার মতামত জানান