চলমান পরীক্ষাসমূহ স্থগিত করায় বিপাকে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ ঘোষণা করায় লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন কারণ তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চলমান পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে ।  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন । শিক্ষার্থীরা ফের বড় ধরনের সেশনজটের আশঙ্কা করছেন ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে বর্তমানে অনার্স পার্ট-৪-এর আর ৩টি পরীক্ষা বাকি রয়েছে। এতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লক্ষ ৩৬ হাজার। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে অনার্স পার্ট-২-এর পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। এতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার। এ ছাড়া আগামী মাসের শুরুতেই এলএলবি পার্ট-২-এর মৌখিক, বিএড ও এমএডের মৌখিক পরীক্ষা, বিবিএ পঞ্চম ও সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা, সিএসই দুই বর্ষের পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল।

পরীক্ষা স্থগিত করায় বিপাকে পড়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর শুরু হয় ২০১৬-১৭ সেশনের স্নাতক ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা। এরই মধ্যে ৬টি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। বাকি তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা ২৩, ২৭ ও ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ তিন বছর অপেক্ষা শেষে এই মাসেই শেষ হতো তাঁদের স্নাতক পরীক্ষা।কিন্তু এই পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় প্রায় ১০ লক্ষ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার প্রহর আরো দীর্ঘ হলো।

এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান  বলেন, ‘আগেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালে আমরা সরাসরি পরীক্ষা নিয়েছি কারণ তখন করোনা সংক্রমণ কম ছিল। এখন ঊর্ধ্বগতি।

এ অবস্থায় পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি বাড়বে। তবে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমণ কমে এলে আমরা অন্তত পরীক্ষা শুরুর চেষ্টা করব। এখন আমাদের সুবিধা হলো, শিক্ষকরা শতভাগ ও শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশ টিকা নেওয়া। ’

উল্লেখ্য গত শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের সিদ্ধান্ত নিজেদেরই নিতে বলা হয়। এরপর থেকে একে একে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সরাসরি ক্লাস বন্ধের ঘোষণা আসতে থাকে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের ব্যাপারে কোনো ঘোষণা হয়নি। গতকাল সকালে পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা স্থগিতের খবর পান। এতে তাঁরা কিছু সময়ের জন্য নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন।

জানা গেছে, রাজধানীর সাত কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে। করোনার কারণে দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত বছরের শেষের দিকে পরীক্ষা শুরু হয়। গতকাল ছিল তাঁদের শেষ পরীক্ষা। কিন্তু এই একটি পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন আটকে গেল।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডিগ্রির একটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি রয়েছে। কিছু বর্ষের কিছু মৌখিক পরীক্ষাও চলছিল। এগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া গেলে শিক্ষার্থীদের আটকে থাকতে হবে না। যেসব পরীক্ষা চলছে, সেগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব দেব। ’

ফেনী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহ আলম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনুষ্ঠেয় পরীক্ষাগুলো চলমান রাখা প্রয়োজন ছিল। অনার্স চতুর্থ বর্ষের তিনটি, ডিগ্রির একটি পরীক্ষা বাকি ছিল। আর অনার্স প্রথম বর্ষের ব্যাবহারিক পরীক্ষা এ মাসেই হতো। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে এসব পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রায় ৯ মাস পর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়া হয়েছিল গত বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। আর এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও বছরের মাঝামাঝি নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। সে অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হচ্ছিল। কিন্তু নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও ফের অনিশ্চয়তায় পড়ল।

Check Also

সম্পত্তি লিখে নিয়ে মাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দিলেন সন্তানরা

সন্তানদের বিরুদ্ধে সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে মাকে মারধরের পর ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ …

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

স্নাতক ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) । গত বছরের …

আপনার মতামত জানান