শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কোমলমতী প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর

করোনার ভয়ংকর থাবা শুধু আমাদের দেশে নয় বরং পুরো বিশ্বে ছেয়ে গেছে।বিভিন্ন দেশের সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন।কিছু দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দিলেও করোনার প্রকোপে আবার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

এদিক থেকে আমাদের দেশের সরকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধির যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।সরকারের ছুটি বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই কল্যাণকর।

প্রাথমিকে ইতিমধ্যে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।কর্তৃপক্ষ বলেছেন করোনার প্রকোপের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলতে না পারলে সবাইকে পরবর্তী শ্রেণিতে অটো উত্তীর্ণ করা হবে।

বর্তমানে আসন্ন শীতের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ইউরোপ,আমেরিকায় করোনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।আমেরিকায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরে আড়াই লক্ষ শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছেন।

আজকে ১২নভেম্বর ইরানে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।আমাদের দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৬হাজারেরও বেশী মানুষ করোনায় মারা গেছেন।

তাহলে যে করোনার ভয়ে এতদিন সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলো সেই করোনার ২য় ভয়ংকর পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দিলে তা বজ্র আটুনি ফস্কা গেড়োর মত হয়ে যেত।

তাই সরকারেরর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধি করে অত্যন্ত যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।অনেকে অফিস-আদালত হাট বাজার চালু হওয়ার উদাহরণ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার যুক্তি দেখাচ্ছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অন্যান্য অফিস-আদালত,হাট-বাজার কি এক জিনিস?

তাছাড়া সরকার যেখানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেও পাবলিককে মাস্ক পরাতে পারছেন না,তাহলে সেই পাবলিকরা কোন মুখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার কথা বলেন?

সাধারণ পাবলিক স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বলেতো দেশে দিনে দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার বাড়তেছে।তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার যতটুকু ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে,এখন নভেম্বর-ডিসেম্বরে স্কুল খুলে দিলেও সেই ক্ষতি পূরণ করার কোন সুযোগ নেই।

৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষা যেহেতু হবেনা সেহেতু তাদের কার্যক্রম শেষ,বাকি রইলো প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত এবং এদের বিষয়েতো কর্তৃপক্ষ পূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তাদেরকে পরবর্তী শ্রেণিতে অটো উত্তীর্ণ করা হবে।

ডিসেম্বরে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কোন ক্লাস কার্যক্রম হয়না,বার্ষিক পরীক্ষা হয়।এবারে করোনার প্রকোপে যেহেতু বার্ষিক পরীক্ষা হবেনা তাহলে রিস্ক নিয়ে স্কুল খোলার কোন যৌক্তিকতা বা লাভ আছে কি?

যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বা যার সন্তান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তারাই বুঝেন করোনার জ্বালা,বাকিরা কীভাবে বুঝবেন?আমাদের বুঝতে হবে আমাদের সন্তানরা আমাদের কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ এবং করোনা একটি বৈশ্বিক সংকট।

তাই স্কুল বন্ধ হয়ে আমাদের সন্তানদের পড়াশুনার সাময়িক ক্ষতি হলেও এটার থেকে তাদের জীবনের মূল্য আমাদের কাছে অনেক বেশী।পড়াশুনার এই সাময়িক ক্ষতি পরবর্তী বছরে পূরণ করা সম্ভব হবে কিন্তু সন্তানের জীবন চলে গেলে সেটা আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবে কি?

অনেকের যুক্তি হচ্ছে শিশুরা পার্ক,কোচিংয়ে যাচ্ছেন তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান(প্রাথমিক বিদ্যালয়) খুললে সমস্যা কি?সরকারতো বলেনি যে আপনারা আপনাদের সন্তানদের কোচিংয়ে পাঠান অথবা পার্কে ঘুরতে নিয়ে যান।

বরং প্রশাসন কোচিংয়ের বিরুদ্ধে অনেক জায়গায় অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা পর্যন্ত করেছেন।আমরা যদি অসচেতন হয়ে এবং নিয়ম না মেনে আমাদের সন্তানদের কোচিংয়ে পাঠাই তার জন্য কি সরকার দায়ী?

সরকারের একার পক্ষে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা কি সম্ভব?

আরেকটা বিষয় অনেকে বলছেন যে স্কুল বন্ধে শিক্ষকদের সুবিধা হচ্ছে।আরে ভাই শিক্ষকদের প্রতি এত হিংসা কেন? শিক্ষকরাতো কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে অনলাইন ক্লাসসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

সরকার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বাড়িতে অবস্থান করতে বলছেন নিরাপত্তার স্বার্থে, শিক্ষকরা তাই করছেন।তাহলে এতে সমস্যা কি?

তবে সরকার শিক্ষকদের বাড়িতে অবস্থান করতে বললেও কিছু শিক্ষক এই দুর্যোগের সময়ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে যাচ্ছেন এবং তার ছবি ফেসবুকে আপলোড দিয়ে পুরো শিক্ষক জাতিকে অপরাধীর কাঠগোড়ায় দাড় করাচ্ছেন যা অনৈতিক ও চাকরিবিধি লঙ্ঘন।

কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে সেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন।তাই সার্বিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে বলা যায় যে সরকারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই কল্যাণকর, বাস্তবসম্মত ও শিক্ষার্থীবান্ধব।

লেখক-মাহফিজুর রহমান,শিক্ষক ও ব্লগার

Check Also

প্রাথমিক শিক্ষক

সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দিয়ে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হোক

দেশের নীতিনির্ধারকগণ বলেন প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছেন শিক্ষার ভিত্তি, ভিত্তি মজবুত না হলে শিক্ষার উন্নয়ন কখনোই …

প্রাথমিক শিক্ষক

১০ম গ্রেড দিয়ে সহকারী শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা হোক

প্রাথমিক শিক্ষকরা অবুঝ শিশুদের শিক্ষা দেয়ার মত সবচেয়ে কঠিন ও গুরুদায়িত্ব পালন পালন করেন।পরিশ্রমের দিক …

One comment

  1. The world’s smartest decision to save the next generation.

আপনার মতামত জানান