জেল থেকেই যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নিচ্ছেন পিএইচডির প্রস্তুতি!

মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত,রয়েছেন হুগলির একটি জেলে বন্দি। তিনি জেলে থেকেই ডক্টর অব ফিলোসফি (পিএইচডি) করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অর্ণব। মৌখিক পরীক্ষা দিতে পুলিশি ঘেরাটোপে আজ ২৬ জুন রোজ বুধবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন তিনি।ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর জানিয়েছেন।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বলেছে, তিনি ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মাবলি মেনে আবেদন করলে পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়া হবে। সেই মোতাবেক হুগলি জেলা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। তারা সব ব্যবস্থা করে বুধবার তাকে নিয়ে আসে।

অর্ণবের দাবিতে সমর্থন জানিয়ে হুগলি জেল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছিল মানবাধিকার সংগঠন গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর)। অবশেষে কারা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেওয়ায় অর্ণবের ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে হাজির হয়ে মৌখিক ইন্টারভিউও দেন অর্ণব।

হুগলি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের এক সূত্রে জানা যায়, জেলে ভাল লাইব্রেরি আছে। সেখান থেকে বই নিয়ে পড়াশোনা করছেন অর্ণব। মৌখিক পরীক্ষায় পাস করলে ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করবেন তিনি।২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। ওই হামলায় মৃত্যু ২৩ জন ইএফআর জওয়ান মারা যায়।

ওই ঘটনার মামলায় ২৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত। ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অর্ণবের সাজা হয়। প্রথমে তাকে রাখা হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর সংশোধনাগারে। তারপর তাকে হুগলি সংশোধনাগারে রাখা হয়। সেখান থেকেই পিএইচডি করার আবেদন করেন অর্ণব।

সেই আবেদন নথিভুক্তও করলেও বিষয়টি জেল কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করতে বলেছিলেন বিচারক। কিন্তু সংশোধনাগারে আসার পর অর্ণবের আবেদন বিশেষ পাত্তা পায়নি। তাই মাওবাদী নেতা অনশন করার ঘোষণা দেন। জেল থেকে পরীক্ষা দিয়েই স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্টে (সেট) সফলভাবে উত্তীর্ণ হন তিনি।

কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এসকে দামের ছেলে অর্ণব। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে খড়্গপুর আইআইটিতে পড়াশোনা করতেন তিনি। কিন্তু তিন সিমেস্টারের পর হঠাৎ ক্যাম্পাস থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যান অর্ণব। পরে জানা যায়, সিপিআইয়ের (মাওবাদী)রাজনৈতিক মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে ১৯৯৮ সালে সেই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত মাও নেতা কিষেণজির স্নেহভাজন ছিলেন অর্ণব। আইআইটির ক্যাম্পাস থেকে পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ে-জঙ্গলে হাতে একে-৪৭ নিয়ে ডেরা বেঁধেছিলেন এই যুবক। লালগড় আন্দোলনের সময় তার গেরিলা বাহিনী নাজেহাল করে দিয়েছিল যৌথ বাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দাদের।

একাধিক মাওবাদী হামলায় অভিযুক্ত অর্ণব ২০১২ সালে আসানসোলে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। জেলবন্দি হওয়ার পর অসম্পূর্ণ থাকা উচ্চশিক্ষায় মন দেন ওই গেরিলা নেতা। বিষয় হিসেবে বেছে নেন ইতিহাস। জেল থেকেই অর্ণব প্রথম শ্রেণিতে ইতিহাসে স্নাতক হন। স্নাতকোত্তরেও ৬৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পাস করেন তিনি।

Check Also

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

বিসিএসের প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে

‘বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে দেশের অন্যতম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর …

বই খুলে দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা,দুই কেন্দ্র সচিবসহ ৫ জন প্রত্যাহার

বই খুলে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজের দায়িত্বরত …

আপনার মতামত জানান