বর্তমানে যে জাতিগুলো জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উন্নত সেই জাতিগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থাও উন্নত। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের প্রতি কোন প্রশ্ন তোলার কেউ সুযোগ পায়না।আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন বর্তমানে অনেক উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের অনেক প্রাথমিক শিক্ষার্থী ড্রোন পর্যন্ত নিজেই বানায়।
আর আমরা শুধু আমাদের শিক্ষার্থীরা A+ পেল কিনা, না পেলে পায়নি কেন এগুলো নিয়ে মাতামাতি করি।এজন্য আমাদের দেশে বড় বড় বিজ্ঞানী,ডাক্তার,ইন্জিনিয়ার তৈরী হয়না,আমাদের দেশে তৈরী হয় সর্বোচ্চ বিসিএস ক্যাডার।এই যে ভারতকে নিয়ে আমরা এত ট্রল করি আপনি কি জানেন ওরা জাতে মাতাল তালে ঠিক জাতি।ভারতেও আমাদের মত অনেক অরাজকতা,অপরাজনীতি,খুন,ধর্ষণ দুর্নীতি হয় কিন্তু তাদের সকল রাজনীতিবিদ শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন বিষয়ে একমত।
তাইতো ভারত আজ মঙ্গলগ্রহে নভোজান পাঠাচ্ছে,গুগল,ফেসবুকের বড় বড় পদগুলোতে ভারতীয়রা জায়গা করে নিচ্ছেন,আর আমরা পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগে বলে গুজবে এখনো বিশ্বাস করি।আপনারা হয়তো এখন বলবেন ভারত বড় দেশ,তাদের সম্পদ বেশী এজন্য তারা এগিয়েছে,তাহলে সিংগাপুর ও মালয়েশিয়ার দিকে নজর দিন,তারা আমাদের সাথে প্রায় একসাথে স্বাধীন হলেও আজ তারা কোথায় আর আমরা কোথায়?
দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষায় সব দেশ এগিয়ে গেলেও একমাত্র আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।বিশ্বের Top Ranking এ ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৩৭টি।অন্যদিকে যে পাকিস্তানকে আমরা ব্যর্থ রাষ্ট বলি,সেই পাকিস্তানের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় World Ranking এ স্থান পেয়েছে।শ্রীলংকা,নেপালের বিশ্ববিদ্যালয়ও World Ranking এ আছে,নেই শুধু আমাদের।
এই যে বিশ্ব রাজনীতিতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আমরা যে প্রতিযোগিতা দেখতে পাচ্ছি তারা কিন্তু শুধু রাজনীতি/অর্থনীতি নিয়ে প্রতিযোগিতা করেন না,শিক্ষা নিয়েও প্রতিযোগিতা করেন।আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা সেদেশের এক প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন তোমরা সবসময় জ্ঞানও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কর, কেননা চীন,ইরান ও ভারতের শিক্ষার্থীরা তোমাদের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে,তোমাদের তাদের সাথে সামনে কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে।
বারাক ওবামা কিন্তু মিথ্যে বলেননি,চীন ও ইরানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমে টপ স্থানগুলো দখল করে নিচ্ছে।লাস্ট World Ranking তালিকায় ইরানের শুধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ই ২০টি স্থান পেয়েছে,বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর কথাতো বাদই দিলাম।
চীন,ভারত,আমেরিকা,ইরানের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত বলে তারা সবদিক দিয়ে উন্নত হয়েছে।এই দেশগুলো তাদের দেশের মেধাবীদের বেশী বেতন-মর্যাদা দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকতা পেশায় নিয়ে আসলেও আমাদের দেশে করা হচ্ছে পুরো উল্টা।
এদেশের কিছু মানুষতো রাখঢাক না করেই বলেই ফেলেন প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পড়াতে এসএসসি পাশই নাকি যথেষ্ট।কী অদ্ভূত যুক্তি!তাহলে ভারত,আমেরিকা, সিংগাপুর,জাপান কেন এত খরচ করে এত মেধাবীদের প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগ দিচ্ছে?তারা কি বোকা না আমরা বোকা?
আমাদের দেশে প্রাথমিক মানে শিক্ষকদের কম যোগ্যতায় নিয়োগ দিতে হবে,কম বেতন দিতে হবে,কম মর্যাদা দিতে হবে।তাইতো এখানে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত আছেন এসএসসি,এইচএসসি,স্নাতক, স্নাতকোত্তর,মেধাবী,স্বল্প মেধাবী,ইংরেজি রিডিং পারেনা এমন,স্মার্ট,আনস্মার্ট সব কোয়ালিটি সম্পন্ন শিক্ষক।
এই যোগাখিচুড়ি থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষকদের নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে,যোগ্য শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে হবে।মেধাবী শিক্ষক ও ইংরেজি রিডিং না পারা শিক্ষকদের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে সেটাও বিবেচনা করতে হবে এবং সেভাবে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করতে হলে অবশ্যই এবং অবশ্যই মেধাবীদের এ পেশায় আনতে হবে,তবেই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জিত হবে।
নিম্ন বেতন-মর্যাদা দিয়ে কম মেধাবীদের প্রাথমিক শিক্ষকতা পেশায় আনবেন এবং শিক্ষা চাইবেন উন্নত দেশগুলোর মতো,তা কোনদিন সম্ভব নয়।
আশার কথা হল সরকার একটু হলেও এখন শিক্ষকদের যোগ্যতাভিত্তিক মূল্যায়ন করার চেষ্টা করতেছেন।সরকারের এই উদ্যোগকে প্রাথমিক শিক্ষার স্বার্থে সবাইকে স্বাগতম জানাতে হবে।
অন্যদিকে কর্তৃপক্ষকে প্রাথমিক শিক্ষকদের সমযোগ্যতার অন্য পেশাজীবীরা যে গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, একজন শিক্ষক হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষকদের তার চেয়ে ১টাকা হলেও বেশী দিতে হবে।তাহলেই প্রকৃতভাবে শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হবে।
উন্নত বিশ্বে প্রাথমিক শিক্ষকের বেতন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের চেয়ে বেশি
ইউএনও অফিসের দারোয়ান-ড্রাইভারও প্রাথমিক শিক্ষকের চেয়ে বেশি বেতন পায়-অধ্যাপক কামরুল হাসান
প্রাথমিক শিক্ষকতা পেশার কিছু সুবিধা যা আপনাকে এই পেশায় আকৃষ্ট করবে