পরীক্ষার জন্য ছাপানো প্রশ্নেই অ্যাসাইনমেন্ট, আজ এসএসসির শুরু,২৬জুলাই এইচএসসির

অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল প্রস্তুতি হয়ে যাবে । ইতোমধ্যে এসএসসির প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়ে গেছে।শিক্ষার্থীদের সেখান থেকেই  দেওয়া হবে অ্যাসাইনমেন্ট।

অন্যদিকে এইচএসসির প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও পরিশোধন কাজ শেষ হলেও শুধু মুদ্রণ বাকি আছে। এই স্তরেও অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এবং প্রণীত প্রশ্নপত্র অগ্রাধিকার পাবে। মূলত কাক্সিক্ষত ‘শিখনফল’ অর্জনের লক্ষ্যে সরকার এই প্রথা চালু করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, সারা দেশে আজ রোববার প্রায় ২২ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে। অ্যাসাইনমেন্ট আপলোড করা হবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে ।সেখান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডাউনলোড করে তা শিক্ষার্থীদের দেবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষা, সাধারণ বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মতো আবশ্যিক এবং চতুর্থ বিষয়ে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে না।

পরীক্ষাও দিতে হবে না এসব বিষয়ে। বিভাগভিত্তিক ৩টি নৈর্বাচনিক করে মোট ৯ বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। এই কার্যক্রম ১২ সপ্তাহ চলবে । প্রতিটি বিষয়ে ৮টি করে ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে।  এই কার্যক্রম মধ্য অক্টোবরে শেষ হওয়ার পর এক মাস থাকবে পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়। এর মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হলে মধ্য নভেম্বরে নেওয়া হবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ কর্মদিবস ক্লাস করিয়ে এই দুই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল।

গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি সংবাদ সম্মেলনে  বলেছেন, অ্যাসাইনমেন্ট ঠিকঠাকভাবে করলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভালো হবে। অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শেষে নভেম্বরের ২য় সপ্তাহে এসএসসি আর ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে সব বিষয়ের ফল দেওয়া হবে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’-এর মাধ্যমে। আর পরীক্ষা নেওয়া গেলে নৈর্বাচনিক বাদে বাকি সব বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে গ্রেড দেওয়া হবে ।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘কাস্টমাইজড’ (সংক্ষিপ্ত) সিলেবাসের আলোকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের সেখান থেকেই  অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। প্রশ্নপত্র ছাপানো হওয়ায় বিকল্প সংখ্যা আগের মতোই থাকছে। ফলে এর আগের চেয়ে এখন ৫০ শতাংশ প্রশ্নের কম উত্তর লিখতে হবে। সব মিলে শিক্ষার্থীদের জন্য যতটা সহজ করা যায়, সেই দিকটি চিন্তায় রাখা হয়েছে কিন্তু তাদের লেখাপড়া করতে হবে।

এদিকে অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। হাসনা হেনা নামে বরিশালের এক অভিভাবক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, কঠোর লকডাউন আগামী ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট  পর্যন্ত চলবে। বর্তমানে সংক্রমণ পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক পর্যায়ে আছে। এ অবস্থায় অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে স্কুল-কলেজে যাতায়াতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ জনাব এম তারিক আহসান বলেন, নৈর্বাচনিক বিষয়গুলোয় অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিখনফল অর্জনের পদক্ষেপটি খুবই সৃজনশীল হয়েছে। তবে আমি মনে করি, সরকার আরও কিছু দিক বিবেচনা করে দেখতে পারে। এর কারণ হচ্ছে, যে গ্রেড দেওয়া হবে, সেটা তুলনামূলক অধিক বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। এমন পরিস্থিতি প্রবর্তন করা ঠিক হবে না, যেটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে।

কেননা তেমনটি হলে এই ফল ভবিষ্যতে গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে পড়বে। তিনি বলেন, ফল তৈরির ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি দিক ভেবে দেখা যেতে পারে। এর মধ্যে আছে-শিক্ষকের কাছ থেকেই শিক্ষার্থী মূল্যায়ন বা গ্রেড, স্ব মূল্যায়ন (শিক্ষার্থী বলবে সে কত পেতে পারে), ইতঃপূর্বে স্কুলে করা বিভিন্ন মূল্যায়ন ফল এবং অ্যাসাইনমেন্ট।

এগুলো গড় করে গ্রেড দেওয়া যেতে পারে। আর অ্যাসাইনমেন্টগুলো উন্মুক্তভাবে না দেওয়া। কারণ ইতঃপূর্বে অন্যান্য স্তরে অ্যাসাইনমেন্টের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর সমাধান আপলোড করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা তেমন একটা শিখছে না।

অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য অটোপাশের পরিবর্তে মূল্যায়ন করেই রেজাল্ট দেওয়া। এখন অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন চলতে থাকবে। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আবশ্যিক বিষয়ে পরীক্ষা না নেওয়ার কারণ দুটি। প্রথমত, সংক্রমণ রোধের চেষ্টা। কেননা আবশ্যিক বিষয়ে শতভাগ শিক্ষার্থীই পরীক্ষার হলে আসবে।

তাদের সঙ্গে এক-দুজন করে অভিভাবক এসে থাকেন। সেই ক্ষেত্রে ঢাকা কলেজ কেন্দ্রের দৃষ্টান্ত দিলে বলা যায়, সেখানে পরীক্ষার্থী ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার হবে আর বাইরে আরও ৩-৪ হাজার অভিভাবক থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা খুবই কঠিন হতো। তাই এ বিষয়গুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে, এসব বিষয়ে ইতঃপূর্বে বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।

জানা গেছে, পরীক্ষা নেওয়া হলে এক বেঞ্চে একজন করে এবং ‘জেড’ আকৃতিতে বসানো হবে। একেক দিন একটি করে গ্রুপের পরীক্ষা থাকবে। এরপরও যদি কোনো কেন্দ্রে আসনব্যবস্থার সংস্থান না হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠানে আসনব্যবস্থা করা যাবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্র সচিবদের স্বাধীনতা দেওয়া হবে বলে জানান আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।

তিনি আরও বলেন, যেসব বিষয়ে ব্যাবহারিক আছে, সেগুলোয় ২৫-এর পরিবর্তে ৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে। ইতোমধ্যে এসব শিক্ষার্থীকে কাজ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যাবহারিক খাতা জমাও নিয়েছে। এছাড়া ১২ নম্বরের এমসিকিউ এবং ২০-২৫ নম্বরের সৃজনশীল প্রশ্নের (সিকিউ) অংশের পরীক্ষা হবে। তবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও ফল তৈরি করা হবে পূর্ণমান ধরে (১০০ নম্বরে)। সিকিউ অংশে ২-৩টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা দেড় ঘণ্টা আর দুই ঘণ্টার পরীক্ষা এক ঘণ্টা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, ২৬ জুলাই এইচএসসি ও সমমানের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে। ওই স্তরের শিক্ষার্থীদের ১৫ সপ্তাহে মোট ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। এতেও গ্রুপভিত্তিক তিনটি করে নৈর্বাচনিক বিষয়ে মোট ছয়টি পত্রে (প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র) এই অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। প্রতি পত্রে পাঁচটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। তাদেরও সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা থাকবে।

সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে গত বছরের মতো এসএসসি থেকে ৭৫ আর জেএসসি থেকে ২৫ শতাংশ নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার ফল করা হবে। এসএসসির ক্ষেত্রে নম্বর প্রাপ্তির শতভাগই গুরুত্ব থাকবে জেএসসির ফলের ওপর। যদি পরীক্ষা হয়, তাহলে নৈর্বাচনিক বিষয়ে আগের (জেএসসি ও এসএসসি) ফলে নজর দেওয়া হবে না। অ্যাসাইনমেন্টের ওপর জোর দেওয়া হবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ।

সূত্র-দৈনিক যুগান্তর

আরো পড়ুন
অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ২য় বর্ষে প্রমোশনের অঙ্গীকারনামা ও প্রত্যয়ন পত্রের নমুনা
এবার উপবৃত্তি পাওয়ার সাথে জামা-জুতা কেনার টাকাও পেল প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা
৬ষ্ঠ-৯ম শ্রেণি ও এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণেচ্ছু শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট চালুর আদেশ
২০২০ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষার ফরম পূরণের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি
প্রাথমিক শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড না দেয়া মানেই শিক্ষার্থীদের মেধাবী শিক্ষক থেকে বঞ্চিত করা

Check Also

এসএসসি পরীক্ষার্থী

২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ভূয়া রুটিন, সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি জারি

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এসএসসি-২০২৪ …

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন

চাকরি দেওয়ার কথা বলে নেয়া ঘুষের টাকা গণশিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ফেরত

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি জাকির হোসেনের নির্দেশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে …

আপনার মতামত জানান