সারা বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কঠোর আন্দোলনে সরকার বাধ্য হয়ে ১ম ও ২য় শ্রেণির সকল চাকরিতে সকল কোটা বাতিল করে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার পরিপত্র জারি করেছিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে স্পষ্ট বলা হয়েছে ৯ম গ্রেড(পূর্বতন ১ম শ্রেণি) ও ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডে(পূর্বতন ২য় শ্রেণি) সরাসরি নিয়োগে কোন কোটা থাকবেনা এবং নিয়োগ হবে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগে বর্তমান বেতন গ্রেড ১৩তম।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোন ধরণের কোটা বহাল রাখার সুযোগ নেই।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য এখানে নারী ৬০%,পুরুষ ২০% এবং পোষ্য ২০% কোটা অর্থাৎ শতভাগ কোটা বহাল রাখা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষকতা পেশার মত গুরুত্বপূর্ণ পেশায় কোটা রাখার যৌক্তিকতা কি তা জাতিকে জানানো হোক।একসময় বাংলাদেশের নারীরা পড়াশুনায় পিছিয়ে ছিল বলে নারীদের প্রাথমিক শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে পুরুষদের চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতায় ৬০% কোটায় নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষকদের নতুন নিয়োগবিধিতে নারী-পুরুষ উভয় প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ২য় শ্রেণির স্নাতক নির্ধারণ করা হয়েছে যা প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইফলক।বর্তমানে বাংলাদেশে পড়াশুনাসহ এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে পুরুষদের থেকে নারীরা পিছিয়ে রয়েছেন।
তাহলে আমাদের সেই মেধাবী বোনদের কেন প্রাথমিকে ৬০% কোটায় নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে দেশ ও জাতির কাছে খোটা শুনতে হবে?
আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী,বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী,স্পিকার নারী,গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বিএনপির নেত্রী নারী,তাহলে কেন নারীরা পিছিয়ে আছে এই কথা বলে তাদেরকে অপমান করা হচ্ছে?
শতভাগ মেধায় নিয়োগ দেয়া হলেও আমাদের দেশের নারীরা নিজের যোগ্যতায় পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশী প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ পাবেন এই আস্থা আমাদের রয়েছে।
অনেকে আবার যুক্তি দেখান প্রাথমিকে নারীদের বেশী প্রয়োজন কারণ নারীরা মাতৃস্নেহে পড়ান।আচ্ছা এই যুক্তিটা কি আসলে ঠিক?প্রাথমিকে দরকার দক্ষ ,মেধাবী ও মিশুক প্রকৃতির শিক্ষক।সেই শিক্ষক পুরুষ হোক অথবা মহিলা হোক,সেটা কোন ব্যাপার নয়।
প্রাথমিকে মহিলা শিক্ষক নিয়োগ দিলেই যদি মাতৃস্নেহে পড়াশুনা হয় তাহলে বিশ্বের সেরা শিক্ষব্যবস্থার দেশগুলো যেমন ফিনল্যান্ড,সিংগাপুর,জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকার প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের দেশের মত মহিলাদের ৬০% কোটা রেখে নিয়োগ দিতেন।
আমাদের প্রতিবেশী ভারত,শ্রীলংকায় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা আছে কি?উত্তর হচ্ছে নেই,তাহলে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কোন কোটার প্রয়োজন নেই।যারা মেধায় এগিয়ে থাকবে তাদেরকে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে বরং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জিত হবে এবং দেশ ও জাতি তার সুফল ভোগ করবেন ।
একজন পরীক্ষায় ৭০নম্বর পেয়েও শিক্ষক হতে পারবেন না,অন্যদিকে আরেকজন কোটার জোরে ৬০ নম্বর পেয়েও শিক্ষক হবেন এটা প্রাথমিক শিক্ষার জন্য কখনো ভালো দিক নয়।
একজন শিক্ষক হিসেবে শুধু আমাদের নিজেদের স্বার্থ দেখলেই চলবেনা,পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা,দেশ ও জাতির স্বার্থের কথাও ভাবতে হবে।
তাই একজন শিক্ষক হিসেবে আমি চাই প্রাথমিকে শতভাগ মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া হোক এবং শিক্ষকদের মানসম্মত বেতন-পদমর্যাদা দেয়া হোক।
লেখক-মাহফিজুর রহমান মামুন,শিক্ষক ও ব্লগার।
আরো পড়ুন
ভালো জাতি তৈরি করতে সবার আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে নজর দিতে হবে-অধ্যাপক নজরুল ইসলাম
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সকল ধরণের কোটা বাতিল চেয়ে সরকারকে উকিল নোটিশ
২০২১ সাল থেকেই প্রাইমারী,হাইস্কুল ও কলেজের সাপ্তাহিক ছুটি ২দিন চুড়ান্ত হচ্ছে