প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার পদ সৃষ্টি করা এখন সময়ের দাবী

বাংলাদেশে যত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন তাদের তিনভাগের এক ভাগই হচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে নিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্য যে দেশের বাকি দুইভাগ কর্মকর্তা -কর্মচারীর জন্য ২৮টি ক্যাডার সৃষ্টি করা হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কর্মরত এই একভাগ শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য কোন ক্যাডার নেই।

এর থেকে আশ্চর্যজনক বিষয় আর কি হতে পারে?এমনকি গরু-ছাগল,মাছ,কৃষির জন্য ক্যাডার থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে ক্যাডার না থাকার বিষয়টি কেন আমাদের নীতিনির্ধারক মহোদয়গণের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি সেটাই এখন ভাবার বিষয়।আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ডিপার্টমেন্টে প্রশাসন ক্যাডাররা প্রেষণে নিযুক্ত হয়ে আসেন।তাই উনাদের প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকেনা এবং উনারা আজ আমাদের ডিপার্টমেন্টে তো কাল অন্য ডিপার্টমেন্টে বদলী হয়ে যান।

আরো পড়ুন

বাচ্চাদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত স্কুলগুলো খোলা হবেনা-গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

প্রাথমিক শিক্ষার আসল গলদ শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি না দেয়া

ডিপ্লোমাধারী প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দাবী নয় বরং অধিকার

তাই প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে উনারা যথেষ্ট সময়,মনোযোগ কোনটিই দিতে পারেন না।অনেকে হয়তো প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যাগুলো বুঝতে কেবল সক্ষম হয়েছেন সেই সময় হঠাৎ উনার বদলী আদেশ চলে আসলো অথবা উনার অবসরের সময় চলে এল।উনার জায়গায় তখন অন্য আরেকজন আসলেন,তিনিও সমস্যা বুঝার আগে এই ডিপার্টমেন্ট থেকে বিদায় নিলেন।

এভাবেই চলছে প্রাথমিক শিক্ষা।দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমস্যার কোন সমাধান না হওয়ায় বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে সমস্যায় জর্জরিত ডিপার্টমেন্টে পরিণত হয়েছে।এটার একমাত্র সমাধান হচ্ছে দ্রুত প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার পদ সৃষ্টি করে সহকারী শিক্ষককে এন্ট্রিপদ ধরে মহাপরিচালক পর্যন্ত সিনিয়রিটি ও বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে শতভাগ পদোন্নতি প্রদান করা।

প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ একেবারেই সীমিত।অনেকে যেই পদে যোগদান করেন,সেই পদেই অবসর নেন।পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় দেশের ১ম সারির মেধাবীরা এখানে আসার কোন আগ্রহ পোষণ করেনা।যেসব মেধাবী এখানে আসতেছেন তারাও এখানে উন্নতির কোন সম্ভাবনা না দেখে অন্য ডিপার্টমেন্টে চলে যাচ্ছেন।যারা বিভিন্ন কারণে এখানে রয়েছেন তারাও বিকল্প কোন পেশায় মনোযোগী হচ্ছেন।ফলে প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা এবং জাতি মেধাবীদের সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

তাই কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত আবেদন দ্রুত প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার পদ সৃষ্টি করে সহকারী শিক্ষককে এন্ট্রিপদ ধরে মহাপরিচালক পর্যন্ত শতভাগ পদোন্নতি দেয়া হোক।এটা করা হলে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা ডিপার্টমেন্টে যত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন সবার মানসিক সন্তুষ্টি সাধন হবে, কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং সকল সমস্যার সমাধানও হবে।

লেখক-মাহফিজুর রহমান মামুন,শিক্ষক ও কলামিস্ট

Check Also

প্রাথমিক শিক্ষক

সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দিয়ে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হোক

দেশের নীতিনির্ধারকগণ বলেন প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছেন শিক্ষার ভিত্তি, ভিত্তি মজবুত না হলে শিক্ষার উন্নয়ন কখনোই …

প্রাথমিক শিক্ষক

১০ম গ্রেড দিয়ে সহকারী শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা হোক

প্রাথমিক শিক্ষকরা অবুঝ শিশুদের শিক্ষা দেয়ার মত সবচেয়ে কঠিন ও গুরুদায়িত্ব পালন পালন করেন।পরিশ্রমের দিক …

আপনার মতামত জানান