ঢাকার বেসরকারী স্কুলগুলো আশানুরূপ শিক্ষার্থী পায়নি,ভর্তি হয়েছে খুবই কম

রাজধানীর সাধারণ মানের বেসরকারী স্কুলগুলোতে নতুন বছরে  শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে খুবই কম। এটা গত বছরের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় থাকা এসব বেসরকারি স্কুলগুলোর জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দিয়েছে।

জুরাইন রেলগেট এলাকার মাস্টারমাইন্ড কেজি স্কুলের উদ্যোক্তা সোহরাব হোসেন জানান, তার স্কুলটি এলাকায় মাত্র ৫ বছরেই বেশ সুনাম অর্জন করেছে। এখানে শিশুদের ভর্তির জন্য প্রতিবছর অনেক ভিড় জমে কিন্তু এবার ভিড়তো দূরের কথা,  শিক্ষার্থী খোঁজ করেও পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমাদের এই স্কুলটি মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত সকল ধরণের পরিবারের সন্তানদের জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিল। করোনার প্রকোপের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় অনেক পরিবার গ্রামে চলে গেছে। আবার কেউ কেউ দেখি তাদের সন্তানদের সরকারি স্কুলে দিয়েছে। কারণ বেসরকারি স্কুলের চেয়ে সরকারি স্কুলে খরচ কম। করোনায় আর্থিক সংকটের কারণেও স্কুলে আসছে না অনেক শিশুর পরিবার

লিটল স্টার স্কুল রাজধানীর সূত্রাপুরে বেসরকারি একটি নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৪শর বেশি শিক্ষার্থী গত বছর এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলেও এবার স্কুলটিতে মাত্র ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে ।অনেক অভিভাবক এলাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক তামান্না মজুমদার ।

তিনি বলেন পুরনো শিক্ষার্থীরা তো আসেই না,নতুন শিক্ষার্থীও কমে গেছে।করোনায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ভাড়া, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা ঋণ হয়ে গেছে। এখন যদি কাঙ্খিত সংখ্যক শিক্ষার্থী না পাওয়া যায়, তাহলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।

এ বছরের মতো এত কমসংখ্যক শিক্ষার্থী তাদের কখনই ছিল না বলে জানান কোতোয়ালি এলাকার কিন্ডারগার্টেন ক্ষুদে পন্ডিতের পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক জোহরা চৌধুরী। ২০১৪ সালে সর্বনিম্ন ছিল,কারণ আগের বছর একটা রাজনৈতিক সহিংসতা ছিল। তা-ও প্রায় ১৫০জন শিশু ভর্তি হয়েছিল প্রাক-প্রাথমিক ও ১ম শ্রেণিতে।

তিনি বলেন, গত নভেম্বর থেকে ভর্তির প্রচার করে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত মাত্র ২৮ শিশু ভর্তি হয়েছে। আগে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত সাড়ে ৩শত শিক্ষার্থী ছিল । এখন ৫০ থেকে ৬০ জন পুরাতন শিক্ষার্থী এসেছেন । ২শিফটে স্কুলটি পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে জোহরা চৌধুরী বলেন, ১০ জন শিক্ষক আর দুজন কর্মকর্তা এবং চারজন অফিস সহকারী আছেন।

করোনার সময় স্কুলের আয় না থাকলেও নিয়মিত ভবন ভাড়া দিতে হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন প্রথম কয়েক মাস দিয়েছেন। এর পর অনেক বকেয়া আছে। তিনজন চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

বুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ এ বিষয়ে বলেন, করোনা সংক্রমণে বিশ্বের সব খাতে বড় ধরনের একটা নাড়া দিয়েছে। তার মধ্যে শিক্ষা খাত অন্যতম। আমাদের দেশেও ব্যতিক্রম নয়। মানুষের আয়রোজগার কমে গেছে। ব্যবসা বন্ধ হয়েছে বা কমেছে। কর্ম হারিয়েছে অনেক মানুষ। এ কারণে শহর থেকে পরিবারগুলো গ্রামে চলে গেছে।

এটি এক ধরনের বাস্তুচ্যুতি। এই বাস্তুচ্যুত সাধারণ প্রাকৃতিক ঝড়, বন্যা, নদীভাঙনের কারণেই বেশি হয়। আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণ মহামারীতে সেটি ভিন্ন রূপে ঘটেছে ।আগের স্কুলে ফিরছে না এ কারণে বাস্তুচ্যুত পরিবারের শিশুরা ।

তবে শহরে থাকুক বা গ্রামে থাকুক, শিশুরা এ দেশেই আছে। আমরা তাদের ঝরেপড়ার একটা আশঙ্কা আমরা আগেই করেছি। সরকার তাদের লেখাপড়ায় যুক্ত রাখতে নিশ্চয় কোনো পরিকল্পনা নিয়েছে। না নিলেও তা দ্রুত নিতে হবে। কারণ এখন নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এ বিষয়ে বলেন, করোনায় যেসব পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তাদের শিশুদের নিজ এলাকায় সরকারি স্কুলে ভর্তি নেওয়ার নির্দেশনা আগেই দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে  আগের শ্রেণির যে কোনো ডকুমেন্ট ওই শিক্ষার্থীর দেখালেই চলবে।

শিক্ষার্থীদের আর্থিক সংকটের কারণে ঝরেপড়া হার কমিয়ে আনতে আমরা বৃত্তি, উপবৃত্তি এবং জামাকাপড় কিনতে সহায়তা করছি। তাছাড়া স্কুলে যে মিড-ডে মিল বিস্কুট দেয়া হতো, সেটিও এখন বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর তারা স্কুলেই একবেলা খেতে পারবে। বেসরকারি স্কুলে খরচ বেশি। অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান- আপনার সন্তানকে স্থানীয় সরকারি স্কুলে ভর্তি করান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীর বৃত্তি, উপবৃত্তি চালু রয়েছে। কারিগরি শিক্ষার্থীদেরও আগের সব সুযোগ-সুবিধা পাবে, সঙ্গে বাড়তি কিছু করারও চেষ্টা করছে সরকার।

মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছ থেকে বিশেষ ভাতা পাবেন। যোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে এ জন্য আবেদন চাওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ এ আবেদন চেয়েছে এবং আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ।। গত ৫ জানুয়ারি কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

সূত্র-দৈনিক আমাদেরসময়

আরো পড়ুন

সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দিয়ে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হোক
আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তির নির্দেশ
এপ্রিল মাসের আগে স্কুল কলেজ খোলার কোন পরিকল্পনা আপাতত নেই
১১ মাস পার,এখনও ১৩তম গ্রেডের সুবিধা পাননি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা

Check Also

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

বিসিএসের প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে

‘বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে দেশের অন্যতম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর …

বই খুলে দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা,দুই কেন্দ্র সচিবসহ ৫ জন প্রত্যাহার

বই খুলে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজের দায়িত্বরত …

আপনার মতামত জানান