সমন্বিত নিয়োগবিধি সহকারী শিক্ষকদের উপরে উঠার সিড়ি নাকি কফিনের শেষ পেরেক?

মিডিয়ায় বিভিন্ন সময়ে মাননীয় সিনিয়র সচিব মহোদয় বলেছেন যে আমরা শিক্ষকদের উপরে উঠার সিড়ি তৈরী করতেছি,এজন্য প্রধান শিক্ষক পদে আর বাইরে থেকে কোন নিয়োগ দেয়া হবেনা,সহকারী শিক্ষকরাই এই পদে শতভাগ পদোন্নতি পাবেন।

মাননীয় সিনিয়র সচিব স্যারের এমন বক্তব্য মিডিয়ায় দেখে আমরা সহকারী শিক্ষকরা আনন্দিত হই এই ভেবে যে সম্মানিত সিনিয়র সচিব স্যার হয়তো সহকারী শিক্ষককে এন্ট্রিপদ ধরে মহাপরিচালক পর্যন্ত পদোন্নতির সিড়ি তৈরী করতেছেন।এতদিন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে প্রাথমিকের প্রধান ও সহকারী শিক্ষক উভয়ই ৪৫বছর পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারতেন এবং শিক্ষকদের জন্য ৫০% কোটা ছিল।

কিন্তু নতুন সমন্বিত নিয়োগবিধিতে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় কোটা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে শুধু প্রধান শিক্ষকদের বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দেয়ার প্রস্তাবনা করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষকরা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে ৮০% পদোন্নতি পাবেন বাকি ২০% বাইরে থেকে নিয়োগ দেয়া হবে।সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পদ খুব অল্প তারপরেও এখানে শতভাগ পদোন্নতি না দিয়ে ৮০% পদোন্নতি রাখা হয়েছে।যাহোক এটা প্রধান শিক্ষকদের ব্যাপার,উনারা যদি এ বিষয়ে প্রতিবাদ না জানান তাহলে আমাদের দরকার কি?আমি যেহেতু একজন সহকারী শিক্ষক তাই আমি সহকারী শিক্ষকদের বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করছি।

আমরা সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক+ডিপ্লোমাধারী হয়ে প্রথম থেকে ১১তম গ্রেড দাবী করে আসছি কিন্তু শুধু আমাদেরকে ১১তম গ্রেড না দেয়ার জন্যই মাঝখানে প্রয়োজন না হলেও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করার প্রস্তাবনা পাঠানো হল।নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিকের চেয়ে দ্বিগুণ পদ থাকলেও সহকারী প্রধান শিক্ষকের কোন পদ নেই কিন্তু প্রাথমিকে নাকি এই পদের ভীষণ দরকার।

খুব ভালো কথা,আমরা সহকারী শিক্ষকরা দাবী জানালাম পদ সৃষ্টি করুন,আমাদের কোন আপত্তি নেই কিন্তু সহকারী শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক উভয়কে একই গ্রেডে রাখতে হবে।দুটি আলাদা পদ একই গ্রেডে রাখার উদাহরণ আমাদের প্রাথমিক ডিপার্টমেন্টেই আছে।উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার একই গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন অথচ পদ আলাদা।

পিটিআইয়ের ইন্সট্রাক্টর ও পিটিআইয়ের সহকারী সুপার পদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবীকে কোন পাত্তা না দিয়ে আমাদের জন্য ১৩তম গ্রেডের গেজেট জারি করলেন।

ভবিষ্যতে প্রধানদের ১০ম গ্রেড দেয়া হলে,উড়ে এসে জুড়ে বসা নতুন সহকারী প্রধান পদকে ১১তম গ্রেড দিয়ে তারপরে সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেড দেয়া হবে।সহকারী শিক্ষকরা চাপা কষ্ট নিয়ে চুপ করে থাকলো,কারণ আমাদের নেতারা নিজেরাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।তাই কর্তৃপক্ষ যা করবেন তা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় কি?

কিন্তু এখন উপরে উঠার সিড়ির নামে সহকারী শিক্ষকদের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে আবেদন করার অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হচ্ছে।প্রধান ও সহকারী শিক্ষক উভয়কে বিভাগীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিলে সমস্যা কি?এখন কর্তৃপক্ষের যুক্তি হয়তো এটা যে আমরা শতভাগ পদোন্নতি দিব,এজন্য সহকারী শিক্ষকদের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে বিভাগীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া যাবেনা।

খুবই ভালো কথা।কিন্তু সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পেতে প্রধান শিক্ষকদের বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হওয়ার ব্যবস্থা করা হল,অন্যদিকে সহকারী শিক্ষক থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিতে কোনধরণের বিভাগীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হলোনা কেন?

একজন সহকারী শিক্ষক সিনিয়রিটির ভিত্তিত্তে কতদিনে সহকারী থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হবেন,আবার সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে কতদিনে প্রধান শিক্ষক হয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হওয়ার জন্য বিভাগীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন?

আমরা এখানে সহকারী শিক্ষকদের জন্যতো উপরে উঠার কোন সিঁড়ি দেখতে পাচ্ছিনা বরং আমাদের কফিনে শেষ পেরেক দেখতে পাচ্ছি।তাই আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে হয় সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে প্রধান ও সহকারী শিক্ষক উভয়কে বিভাগীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হোক অথবা সহকারী শিক্ষক থেকে উপরের পদগুলোতে ৫০% সিনিয়রিটি ও ৫০%বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে শতভাগ পদোন্নতি দেয়া হোক।

তবে বিভাগীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য একটা যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া উচিত।উদাহরণস্বরূপ সহকারী শিক্ষক থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করতে হলে কমপক্ষে ৪বছর সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকতে হবে।এরকম করা হলে সকল শিক্ষক সমানভাবে উপকৃত হবেন।

লেখক-মাহফিজুর রহমান,সহকারী শিক্ষক।

আরো পড়ুন

Check Also

প্রাথমিক শিক্ষক

সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দিয়ে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হোক

দেশের নীতিনির্ধারকগণ বলেন প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছেন শিক্ষার ভিত্তি, ভিত্তি মজবুত না হলে শিক্ষার উন্নয়ন কখনোই …

প্রাথমিক শিক্ষক

১০ম গ্রেড দিয়ে সহকারী শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা হোক

প্রাথমিক শিক্ষকরা অবুঝ শিশুদের শিক্ষা দেয়ার মত সবচেয়ে কঠিন ও গুরুদায়িত্ব পালন পালন করেন।পরিশ্রমের দিক …

আপনার মতামত জানান