সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড,শতভাগ পদোন্নতি প্রক্রিয়া ও কিছু প্রস্তাব

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি দিয়ে উপরে উঠার সিড়ি তৈরী করতে চাচ্ছেন।নিঃসন্দেহে এটা খুবই ভালো একটা উদ্যোগ।কিন্তু পদোন্নতির সিস্টেম নিয়ে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি শিক্ষকদের মধ্যেও মতভেদ রয়েছে।

সিনিয়র শিক্ষকরা চাচ্ছেন সিনিয়রিটির মাধ্যমে শতভাগ পদোন্নতি দেয়া হোক কিন্তু তরুণ ও জুনিয়র শিক্ষকরা চাচ্ছেন বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে শতভাগ পদোন্নতি দেয়া হোক।

আমরা যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করি তাহলে উভয়ের দাবীর যৌক্তিকতা রয়েছে।সিনিয়ররা দীর্ঘদিন ধরে এই বিভাগে সেবা দিয়ে আসছেন তাই তাদের দাবী অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়,আবার শুধু সিনিয়রিটির মাধ্যমে পদোন্নতি দিলে জুনিয়র শিক্ষকরাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

কারণ শেষ বয়সে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হলে সেই বয়স্ক শিক্ষকের কাজ করার উৎসাহ আর আগের মত থাকবেনা।অন্য ডিপার্টমেন্টগুলোতে পিয়ন পদে যোগদান করেও একসময় কর্মকতা হচ্ছেন অথচ প্রাথমিক শিক্ষকরা যে পদে জয়েন করতেছেন সেই পদে অবসর নিচ্ছেন।

শিক্ষকদের আর্থিকভাবে কোন উৎসাহ দেয়া হয়না বলে শিক্ষকরা তাদের কাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতেছেন।এ অবস্থায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আমার কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে।

আমার বিশ্বাস এই প্রস্তাবনাগুলো কার্যকর করলে প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতির সমস্যার সমাধান হবে এবং শিক্ষকরাও তাদের কাজের গতি ফিরে পাবেন।

প্রাথমিকে একসময় মহিলা শিক্ষকদের এইচএসসি পাশে নিয়োগ দেয়ার কারণে সরকার সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।কিন্তু এখন মহিলা সহকারী শিক্ষকদের অনুমতিবিহীন অর্জিত উচ্চতর সনদ যুক্ত করার অনুমতি দেয়ায় প্রাথমিকে এখন এসএসসি অথবা এইচএসসি পাশ মহিলা শিক্ষক প্রায় থাকবেনা।

অল্প কিছু থাকলেও তা ধরার বিষয় নয়।সরকার এখন প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড প্রদান করে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের চাওয়া পূরণ করতে পারেন।১১তম গ্রেড দেয়া হলে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের চাপা কষ্ট দূর হয়ে যাবে।

সেইসাথে সরকার সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের পদ সৃষ্টি করে একজন সহকারী শিক্ষকের ৫বছর চাকরির বয়স হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই সহকারী শিক্ষককে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিতে পারেন।এজন্য সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের আলাদা গ্রেড না দিয়ে তাদেরকে পদোন্নতির সময় ২টি বিশেষ ইনক্রিমেন্ট দিতে পারেন।

এটা করা হলে কোন সহকারী শিক্ষককে যে পদে যোগদান,সেই পদ থেকে অন্তত  অবসরে যেতে হবেনা।সরকারী হাইস্কুলে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকের এই পদ রয়েছে।

সিনিয়র সহকারী শিক্ষক থেকে ৫০% সিনিয়রিটি ও ৫০%বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দিতে পারেন।সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ হবে ১০ম গ্রেডের।

একইভাবে সহকারী প্রধান থেকে ৫০% সিনিয়রিটি ও ৫০% বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদে এবং একইভাবে উপরের পদগুলোতে ধারাবাহিকভাবে শতভাগ পদোন্নতি দেয়া যেতে পারে।প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের অন্তত ৯ম গ্রেড দিতে হবে।

এভাবে পদোন্নতি দিলে আমার মনে হয় কোন সিনিয়র অথবা জুনিয়র শিক্ষকের মনে কষ্ট থাকবেনা।শিক্ষকদের আর্থিকভাবে কাজের উৎসাহ ও পদোন্নতির সুযোগ দেয়া না হলে যতই কড়াকড়ি করা হোকনা কেন তাতে শিক্ষার মানের কোন উন্নয়ন হবেনা।

আর শিক্ষার মানের উন্নয়ন না হলে দেশ ও জাতি কখনোই উন্নত দেশের কাতারে পৌছাতে পারবেন না।তাই কর্তৃপক্ষের কাছে উক্ত প্রস্তাবগুলো সদয় বিবেচনার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

লেখক-মাহফিজুর রহমান,শিক্ষক ও ব্লগার

আরো পড়ুন
প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকার নির্দেশ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে
২০২১ সাল থেকেই প্রাইমারী,হাইস্কুল ও কলেজের সাপ্তাহিক ছুটি ২দিন চুড়ান্ত হচ্ছে
ভালো জাতি তৈরি করতে সবার আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে নজর দিতে হবে-অধ্যাপক নজরুল ইসলাম

Check Also

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

বিসিএসের প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে

‘বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে দেশের অন্যতম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর …

বই খুলে দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা,দুই কেন্দ্র সচিবসহ ৫ জন প্রত্যাহার

বই খুলে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজের দায়িত্বরত …

আপনার মতামত জানান