সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডের ফিক্সেসনের দ্রুত সমাধান হবে-প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব

সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত সফটওয়্যার ‘আইবাস’-এ কারিগরি জটিলতার কারণে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হয়নি।দীর্ঘসময় ধরে ১১তম গ্রেডের দাবীতে আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও গত ৯ ফেব্রুয়ারীতে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করেন। কিন্তু ১৩তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হলেও শিক্ষকরা এখনও সেই আগের বেতনই পাচ্ছেন কারণ, তাদের বেতনভাতা এখনও ১৩তম গ্রেডে ফিক্সেশন (নির্ধারণ) হয়নি।

সারাদেশে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন লাখ ৫২ হাজার সহকারী শিক্ষক কর্মরত রয়ছেন,তাদের মধ্যে ৬০% নারী। জাতীয় বেতন স্কেলের ১১তম গ্রেডে বেতনের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করার পর গত ৯ ফেব্রুয়ারি এই শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৩তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে এই গ্রেডের সুবিধাপ্রাপ্তি নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়। কারণ, প্রচলিত নিয়মে বেতন নিম্ন ধাপে নির্ধারণ করলে শিক্ষকদের বেতন বর্তমানের চেয়ে কমে যাচ্ছিল।

অবশেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের হস্তক্ষেপে ১৩তম গ্রেডের উচ্চ ধাপে বেতন ফিক্সেশন করায় সে জটিলতার সমাধান হলেও এবার নতুন করে সংকট তৈরি করেছে আইবাস সফটওয়্যার।

সারাদেশের মাঠ পর্যায়ে সহকারী শিক্ষকগণ ১৩তম গ্রেডের উচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারণের জন্য উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসগুলোতে যোগাযোগ করেন কিন্তু হিসাবরক্ষণ অফিস আইবাসে বেতন নির্ধারণ করতে গিয়ে জটিলতায় পড়ে। সিস্টেম থেকে বারবার নোটিফিকেশন দেয় যে- ‘উন্নীত স্কেলে বেতন নির্ধারণ এই পদের জন্য প্রযোজ্য নয়।’ মাঠ পর্যায়ের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তারা বলেন, এ বিষয়ে তাদের করণীয় কিছু নেই, যতক্ষণ না আইবাসে উচ্চ ধাপের বেতন নির্ধারণের সিস্টেম এন্ট্রি না করা হয়।

কয়েকজন শিক্ষক গণমাধ্যমকে বলেন, তারা দীর্ঘ আন্দোলন করে ১৩তম গ্রেড অর্জন করেছেন, কিন্তু তা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা হওয়ায় শিক্ষকদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ছে। তারা এখন বিষয়টি সমাধানের জন্য  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকে চেয়ে আছেন।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে। সহকারী শিক্ষকদের বেতন ফিক্সেশন যাতে দ্রুত হয়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ১৩তম গ্রেডের নিম্ন ধাপে বেতন নির্ধারণ করলে আইবাস সফটওয়্যার তার সিস্টেমে ইনপুট নেয়। কিন্তু ১৩তম গ্রেডের উচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারণ করলে আইবাসের সিস্টেম কোনো ইনপুট নিচ্ছে না। অথচ নিম্ন ধাপে বেতন নির্ধারণ করলে শিক্ষকদের বেতন কমে যাচ্ছে। এ কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় উচ্চ ধাপেই এই শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়ে এর আগে জানিয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (সদ্য অবসরে যাওয়া) মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ কয়েক দিন আগে বলেন, আইবাসের ইনপুট সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। মহাপরিচালক আরও বলেন, সিস্টেম পরিবর্তন করতে কিছু প্রক্রিয়াগত বিষয় রয়েছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজটি করা সম্ভব হবে।

জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ মাহবুবর রহমান সমকালকে বলেন, ১৩তম গ্রেডে উচ্চ ধাপে ফিক্সেশনের জন্য আমরা উপজেলার কয়েকজন শিক্ষক হিসাবরক্ষণ অফিসে গিয়েছিলাম। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জানালেন, আইবাস সফটওয়্যারে সহকারী শিক্ষকদের উচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই বেতন ফিক্সেশন সম্ভব নয়।

নোয়াখালী জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর নেসার আহমেদ জানান, ১৩তম গ্রেডে ফিক্সেশনের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য জেলার প্রাথমিক শিক্ষকরা তাদের অফিসে গিয়েছিলেন। তিনি আইবাসের সফটওয়্যার চেক করে দেখেছেন। সফটওয়্যারে পিপি ছাড়া উচ্চ ধাপে ফিক্সেশনের কোনো সিস্টেম নেই। ‘নিম্নধাপ + পিপি’ আসে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সফটওয়্যারে এই এন্ট্রি পদ্ধতি পরিবর্তন করা ছাড়া তাদের পক্ষে শিক্ষকদের বেতন ফিক্সেশন শুরু করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া ফিক্সেশনের কাজ শুরু হলেও অনেক সময় লেগে যাবে। কারণ, প্রতিটি উপজেলায় হাজারের ওপর শিক্ষক রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের ফিক্সেশনের কাজ একজন একজন করে হিসাবরক্ষণ অফিসকেই করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ১৩তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে প্রায় আট মাস আগে। নানা জটিলতার কারণে আজ পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতন ফিক্সেশন করা সম্ভব হয়নি। আমরা চাই, দ্রুত এই সফটওয়্যারের সিস্টেম আপডেট করে শিক্ষকদের হয়রানি থেকে মুক্ত করা হোক। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

এই শিক্ষক নেতা আরো বলেন, বেতনভাতা দ্রুত ফিক্সেশন করতে ২০১৫ সালের মতো শিক্ষকদের নিজে নিজে আইবাসে ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। হিসাবরক্ষণ অফিস শুধু ভেরিফাই করে দেবে। তাহলে অল্প সময়ে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষকেরই বেতন ফিক্সেশন করা সম্ভব হবে।

আগে শিক্ষকদের বেতন উন্নীত স্কেলের নিম্ন ধাপে ফিক্সেশন হতো। এতে বেশির ভাগ শিক্ষকের মূল বেতন কমে যেত। এ সমস্যা সমাধানে শিক্ষক সংগঠনগুলোর দাবির মুখে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন উচ্চ ধাপে ফিক্সেশনের নির্দেশনা আসে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যবহার করা আইবাস সফটওয়্যারে উচ্চ ধাপে ফিক্সেশনের সিস্টেম সংযুক্ত না করায় বেতন ফিক্সেশন আটকে গেছে।

আরো পড়ুন
শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা-অধ্যাপক ড.জাফর ইকবাল
উন্নত বিশ্বে প্রাথমিক শিক্ষকের বেতন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের চেয়ে বেশি
প্রাক-প্রাথমিক বনাম শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ সার্কুলার,জেনে নেই উভয়ের খুঁটিনাটি

Check Also

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

বিসিএসের প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে

‘বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে দেশের অন্যতম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর …

বই খুলে দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা,দুই কেন্দ্র সচিবসহ ৫ জন প্রত্যাহার

বই খুলে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজের দায়িত্বরত …

আপনার মতামত জানান