যেভাবে সিঙ্গাপুর শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন করে শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছে গেল

১৯৬৫ সালে যখন মালয়েশিয়ার অধীন থেকে  একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হলো, তখন ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের হাতেগোনা অল্প কিছু মিত্র ছিল । তারচেয়েও কম ছিল তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ। তাহলে সেই সিঙ্গাপুরের কীভাবে শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছে গেল, হয়ে গেল বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশ হিসাবে?

উত্তরটি খুবই সহজ, আমাদের বাংলাদেশে যে তোতাপাখির মত মুখস্ত বুলিটি প্রায়ই আওড়ানো হয়ে থাকে যে, জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে , সিঙ্গাপুর তাদের উন্নয়নের জন্য ঠিক সেই প্রকল্পটিই হাতে নিয়েছিল।

এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে তারা তাদের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করেছিল?

এই উত্তরটিও খুব সহজ,তারা তাদের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিতে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব আরোপ করেছিল কারণ বাস্তবে তাদের বিশ্বাস ছিল যে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, এবং নতুন স্বাধীন হওয়া একটি জাতির মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করার প্রচেষ্টায় সিঙ্গাপুর ঠিক কতটুকু সফল, তা যাচাইয়ের জন্য আমরা ওইসিডি’র প্রোগ্রাম ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট (পিসা)-র প্রকাশিত ত্রিবার্ষিক ফলাফলগুলোর দিকে তাকাতে পারি , যেখানে ধারাবাহিকভাবেই বিশ্বের সেরাদের তালিকায় সিঙ্গাপুর স্থান নিয়েছেন ।

 পিসা হলো বিশ্বের উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা পরিমাপের জন্য গৃহীত একটি পরীক্ষা, যেখানে অংশ নিয়ে থাকে ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা।কম্পিউটারের মাধ্যমে দুই ঘণ্টায় গৃহীত এই পরীক্ষার মূল বিষয় তিনটি: গণিত, পঠন দক্ষতা ও বিজ্ঞান। এই তিনটি বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয় যে কোন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কতটুকু এগিয়েছে, কিংবা পিছিয়েছে, এবং বিশ্বে তাদের অবস্থান ঠিক কোথায়।

এই পরীক্ষার ফলাফল থেকেই জানা যায় যে, সিঙ্গাপুরের ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা আমেরিকার সমবয়সী শিক্ষার্থীদের চেয়ে গণিতে প্রায় তিন বছর এগিয়ে। শুধু তা-ই নয়, সিঙ্গাপুরের একজন গড়পড়তা শিক্ষার্থী অন্যান্য অধিকাংশ প্রথম বিশ্বের অধীনস্থ দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের চেয়ে ইংরেজি পাঠে ১০ মাস, এবং গণিতে ২০ মাস এগিয়ে রয়েছে।

ট্রেন্ডস ইন ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথম্যাটিকস অ্যান্ড সায়েন্স স্টাডিজ এর গবেষণায় উঠে এসেছে যে অন্যান্য আন্তর্জাতিক পরীক্ষাগুলোতেও গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীরা শীর্ষস্থান লাভ করে। তাছাড়া সিঙ্গাপুরের অপেক্ষাকৃত কমবয়সী শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন পরীক্ষায় একই রকম ভালো করে, এবং দেশটির বিভিন্ন স্কুল থেকে বেরোনো গ্র্যাজুয়েটরা এখন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে রয়েছেন ।

এসব কারণেই সিঙ্গাপুরের শিক্ষাব্যবস্থা এখন বিবেচিত হচ্ছে গোটা বিশ্বের মধ্যে সেরা হিসেবে। চমকপ্রদ বিষয় হলো, মোট জিডিপি-র আকারে আমাদের বাংলাদেশ এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরের থেকে এগিয়ে। কিন্তু বিবেচ্য যদি হয় শিক্ষার মান, সেখানে সিঙ্গাপুরের ধারের কাছেও নেই বাংলাদেশ। পিসার এই পরীক্ষায় এখনো অংশগ্রহণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই পিসার র‍্যাংকিং অনুযায়ী বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে তুলনা করা অসম্ভব।

দ্য ইকোনমিস্ট বলেছেন যে এই দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর অনেক কিছুই শেখাতে পারে বিশ্বকে”। এই উক্তি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরাও বলতে পারি, বাংলাদেশেরও অনেক কিছুই শেখার আছে সিংগাপুরের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে  ।

সিঙ্গাপুরের থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হলো, তাদের শিক্ষাখাতে প্রচুর ব্যয়। যদি শিক্ষাকেই জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়, জাতীয় বাজেটে সেটির প্রতিফলনও অবশ্যই থাকবে । সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে সেই প্রতিফলন বরাবরই থাকে। প্রতি বছর মোট জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশের মতো তারা ব্যয় করে থাকে শিক্ষাখাতে। কিন্তু আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই, সেখানকার চিত্র হতাশাজনক।

বাংলাদেশ সরকার ইউনেস্কো ও ডাকার সম্মেলনে শিক্ষাখাতে জিডিপির ৭ শতাংশ ও ৬ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ২০ শতাংশ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ১০ থেকে ১২ শতাংশেই ঘুরপাক খাচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ১২.৬ শতাংশ। তবে যদি শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত থেকে প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে শুধু শিক্ষার কথা বিবেচনা করা হয়, তাহলে কিন্তু বরাদ্দের পরিমাণ কমে আসবে।

সিঙ্গাপুরের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরীক্ষামুক্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে প্রাথমিক স্তরের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য মার্কিং ও গ্রেডিংয়ের বদলে আলোচনা, হোমওয়ার্ক ও কুইজ নিয়ে আসা হয়েছে। অর্থাৎ এই দুই বছর শিক্ষার্থীরা কোনো রকম পরীক্ষার চাপ ছাড়াই, হাসি-আনন্দে শিক্ষালাভ করতে পারছে। এছাড়া সামগ্রিকভাবেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের অন্যান্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষাকে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করা হয়েছে।

যেমন- কেউ ভগ্নাংশে নম্বর পেলে, ডেসিমালের স্থলে তাকে নিকটতম পূর্ণসংখ্যার নম্বরটি দেয়া হয়। অনেকের কাছেই এটিকে খুব একটা তাৎপর্যপূর্ণ না-ও মনে হতে পারে। কিন্তু এর ফলে আগে যেমন .১ নম্বরের এদিক-ওদিক হওয়াও শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক বড় ব্যাপার ছিল, এবং পরীক্ষার সাফল্যকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হতো, সে ধরনের মানসিকতা নিশ্চিহ্ন হবে।

এবার কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে সিঙ্গাপুরের শিক্ষাব্যবস্থার একটি দৃশ্যমান পার্থক্যের সন্ধান ঠিকই মিলল। তবে এই পার্থক্যের চেয়েও বড় বিষয় হলো, একদম জরুরি অবস্থা জারি না হলেও, এবং বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা যথেষ্ট ফলদায়ক (এবং বিশ্বসেরা) হওয়া সত্ত্বেও, সিঙ্গাপুরের শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেভাবে তাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করেছেন।

বাংলাদেশে কি এ ধরনের মানসিকতা দেখা যায়? বরং এ দেশে কি পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও, এবং নানাভাবে তা প্রমাণিত হয়ে গেলেও, শীর্ষমহল থেকে সেটিকে অস্বীকারের চেষ্টা চালানো হয় না? তাছাড়া আমাদের দেশে কি পাবলিক পরীক্ষার ফল, আরো নির্দিষ্ট করে বললে জিপিএ-৫ প্রাপ্তের সংখ্যাকেই শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নতির সূচক হিসেবে ধরা হয় না?

সুতরাং পার্থক্যটা আসলে নীতি-নির্ধারক ও সিদ্ধান্ত-প্রণেতাদের মানসিকতায়। সিঙ্গাপুরের শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেখানে জরুরি অবস্থা জারি না হলেও শিক্ষাব্যবস্থার ক্রমোন্নতির লক্ষ্যে নিজে থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের শীর্ষ মহলে দেখা যায় উন্নাসিকতা, দেখেও না দেখা কিংবা বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করার প্রবণতা।

এবার গোটা বিষয়টির আরো একটু গভীরে প্রবেশ করা যাক। সিঙ্গাপুরে অবস্থা জারি না হলেও, এবং প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা ফলদায়ক হওয়া সত্ত্বেও, শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বড় একটি পরিবর্তন আনা হলো তা কি নিছকই খেয়ালের বশে? মোটেই না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবে, তারপর তারা পরিবর্তন আনবে, এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিতেও তারা বিশ্বাসী নয়। তারা প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ করে শিক্ষার উপর গবেষণায়, এবং প্রতিনিয়ত পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখে যে নতুন কোনো ধারণার বাস্তবায়ন করা যায় কি না, তাতে বর্তমানের চেয়েও বেশি সুফল পাওয়া যায় কি না।

বড় ধরনের সংস্কারের বিষয়গুলো তো রয়েছেই, এমনকি তারা পাঠ্যপুস্তক রচনা, পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ ইত্যাদিও করে থাকে গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে, যাতে প্রতিনিয়তই তারা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ শিক্ষার্থীবান্ধবতা যাতে নিশ্চিত হয়।

আমাদের বাংলাদেশে কি শিক্ষা নিয়ে এ ধরনের কোনো সুদূরপ্রসারী গবেষণা হয়? একেবারে হয় না বললে ভুল হবে, কারণ বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষা নিয়ে গবেষণার প্রয়াস চালাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস), গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগ ব্র্যাক, প্ল্যান বাংলাদেশ, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), বিআইডিএস, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, গণসাক্ষরতা অভিযান, শিক্ষা সংবাদ ইত্যাদি।

কিন্তু এতসবের পরও কেন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বৈপ্লবিক কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না? কেন এসব গবেষণার সুফল এখনো সেভাবে সাধারণ জনগণের চোখে পড়ছে না? কারণ এ ধরনের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার পর্যবেক্ষণ ও ফলাফল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে যেমন আন্তরিকতা প্রয়োজন, সেটি এখনো অনুপস্থিত। এছাড়া শিক্ষা নিয়ে গবেষণার ফলাফল সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থায় সংযোজিত না হওয়ার আরেকটি বড় কারণ শিক্ষা গবেষণার জাতীয় নীতিমালা প্রণীত না হওয়া।

যেদিন এমন একটি কার্যকর নীতিমালা প্রণীত হবে, সেদিন দেশি প্রেক্ষাপটে পরিচালিত গবেষণার ভিত্তিতেই শিক্ষাব্যবস্থায় নানা ধরণের পরিবর্তন আনা যাবে, অন্ধের মতো অনুসরণ করার প্রয়োজন পড়বে না বিদেশী শিক্ষাপ্রদান পদ্ধতির- যার মধ্যে অনেকগুলো হয়তো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একেবারেই উপযুক্ত নয়।

সিঙ্গাপুরের শিক্ষাব্যবস্থার আরেকটি শিক্ষণীয় দিক হলো পাঠ্যক্রম প্রণয়ন। তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীরতর পাঠ্যক্রম প্রণয়নের, বিশেষত গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে। এর কারণ, তারা চায় একটি শ্রেণীর হাতেগোনা কয়েকজন সব পড়া শিখতে পারবে, আর বাকিরা পিছিয়ে থাকবেন এবং সেই পশ্চাদপদ অবস্থায়ই পরের শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হবেন- এমন পরিস্থিতি যেন কখনো সৃষ্টি না হয়।

এই বিষয়টি আমাদের দেশেও খুবই জরুরি। কারণ একদম নিম্নমানের শিক্ষার্থীদের কথা যদি বাদও দিই, মধ্যম মানের শিক্ষার্থীদেরও পাঠ্যক্রমের অসামাঞ্জস্যতা ও ভারসাম্যহীনতার জন্য প্রচণ্ড পরিমাণে ভুগতে হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে অনেক অধ্যায় ও অনেক বিষয়কে সংযুক্ত করা হয় বলে, খুব কম শিক্ষার্থীর পক্ষেই সম্ভব হয় ওই সকল বিষয়কে পুরোপুরি বুঝে ও আয়ত্ত্বে এনে পরের শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়া।

সিঙ্গাপুরের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শিক্ষণীয় সর্বশেষ কিন্তু সবচেয়ে জরুরি দিকটি হলো, উন্নতমানের শিক্ষক গড়ে তোলা। শিক্ষার্থীরা ততটুকুই ভালো হবে, যতটুকু ভালো হবেন তাদের শিক্ষকেরা। তাই শিক্ষকেরা যাতে সম্ভাব্য শ্রেষ্ঠতম গুণসম্পন্ন হন, তা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। সিংগাপুর সরকার এ বিষয়টি খুব ভালোভাবেই বোঝে।

তাই এমনকি সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্যও তারা প্রতিবছর অন্তত ১০০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন, যাতে ওই শিক্ষকরাও শিক্ষাপ্রদানের একদম আপডেট কলা- কৌশলগুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন। এছাড়া সিঙ্গাপুরের শিক্ষকদেরকে খুব মোটা অঙ্কের সম্মানীও দেয়া হয়, যাতে তাদের সংসারে কোনো টানাপোড়েন না চলে, শ্রেণীকক্ষে নিজেদের সবটুকু ঢেলে দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের যেন বিন্দুমাত্র মানসিক বিক্ষেপণেরও সম্মুখীন হতে না হয়।

সর্বোচ্চ প্রশিক্ষণ ও উচ্চ বেতনের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠতম শিক্ষক সৃষ্টির যে দৃষ্টান্ত সিঙ্গাপুর স্থাপন করে চলেছে সিংগাপুর, সেটি কিন্তু অবশ্যই শিক্ষণীয়। আমাদের দেশে এখনো শিক্ষকতা অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা লাভজনক পেশা নয়। বর্তমানে দেশের প্রাথমিক স্তরের স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষক ১১তম গ্রেডে, সহকারী শিক্ষক ১৩তম গ্রেডে  বেতন পাচ্ছেন।

যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন শুরুই হচ্ছে ১১তম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড থেকে, সেখানে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে এদেশে কতটা হেলাফেলা করা হয়। শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়; এবং সেই মেরুদণ্ডের প্রাথমিক ভিত্তিটা যদি শিশুদেরকে একদম শৈশবে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকতেই প্রদান করা হয়, তাহলে সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনে কেন এমন বৈষম্য করা হবে?

আর যদি এমন বৈষম্,বঞ্চনা করা হয়, তাহলে কেনই বা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিতরা অন্যান্য লাভজনক পেশা ছেড়ে প্রাথমিক শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেবেন? স্বাভাবিকভাবেই যাদের বড় ও বেশি লাভজনক কোনো কর্মসংস্থান হয় না, কিংবা যারা সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষিত নন, তারাই আসেন প্রাথমিক স্তরে শিক্ষকতা করতে।

এমন শিক্ষকদের যতই প্রশিক্ষিত করা হোকনা কেন, তাদের পক্ষে কি কোমলমতি শিশুদের সর্বোচ্চ মানের শিক্ষাদান করা সম্ভব? আর যদি সম্ভব না হয়, তাহলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কি একদম গোড়ায় গলদ থেকে যাচ্ছে না?

কার্টেসী-roar.media

Check Also

প্রাথমিক শিক্ষক

সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দিয়ে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হোক

দেশের নীতিনির্ধারকগণ বলেন প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছেন শিক্ষার ভিত্তি, ভিত্তি মজবুত না হলে শিক্ষার উন্নয়ন কখনোই …

প্রাথমিক শিক্ষক

১০ম গ্রেড দিয়ে সহকারী শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা হোক

প্রাথমিক শিক্ষকরা অবুঝ শিশুদের শিক্ষা দেয়ার মত সবচেয়ে কঠিন ও গুরুদায়িত্ব পালন পালন করেন।পরিশ্রমের দিক …

আপনার মতামত জানান