করোনাকালে পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ছিলেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ার খবর আপাতত তাদেরকে স্বস্তি দিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ঘোষণা অনুসারে এবারের সকল এইচএসসি পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় পাস করবেন। তবে কে কোন গ্রেড পাবেন এটাই এখন সবার আগ্রহের বিষয়।আজ শুক্রবার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদরা বলছেন কোন প্রক্রিয়ায় গ্রেড নির্ধারণ হয় এটি এখন দেখার বিষয়। ঘোষণার পরের দিন গতকাল সার্বিক বিষয় নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রথম বৈঠক হয়েছে এবং বৈঠকে আলোচনায় মূল স্থান পেয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কীভাবে গ্রেড নির্ধারণ করা হবে সে বিষয়টি।
এটি একটি জটিল এবং চ্যালেঞ্জের বিষয় বলে ইতিমধ্যে বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তাদের বলেন শুধু জেএসসি ও এসএসসি’র ফলের ভিত্তিতে গ্রেড নির্ধারণ করলে জটিলতা তৈরি হবে। এ দুটোর বাইরে আর কী কী মানদণ্ড রাখা যায় তা প্রকাশ করার জন্য বলা হয়েছে। সরকার কতৃক ওই কমিটিতে বিস্তারিত মতামতগুলো পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে শুধু দু’টি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে গ্রেডিং হবে না- এটা নিশ্চিত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ।এটার সাথে আরো কিছু বিষয় থাকবে এবং চেষ্টা করা হবে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার না হন।
গত বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত দেন এবং পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার ফল নির্ধারণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। ২০১৯ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পান ৪৭ হাজার ২৮৬ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন।
এবার এইচএসসি-সমমান পরীক্ষায় ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮৯ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণের কথা ছিল। এর মধ্যে নিয়মিত ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৮১ এবং অনিয়মিত ২ লাখ ৬৬ হাজার ২০৮ জন পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে কেউ কেউ এক-দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হলে আবারো পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। প্রাইভেট পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ৩৯০ এবং খারাপ ফলের কারণে ১৬ হাজার ৭২৭ জন পুনরায় পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ড.দিপু মনি বলেন, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা সরাসরি গ্রহণ না করে ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবারের এইচএসসি শিক্ষার্থীরা দুটি পাবলিক পরীক্ষা দিয়ে এসেছে। এদের জেএসসি ও এসএসসি’র ফলের গড় অনুযায়ী এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে। মূল্যায়নের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এ বিশেষজ্ঞ কমিটি নভেম্বর মাসে তাদের পরামর্শ বা মতামত দেবে। তারপর ডিসেম্বরে এই মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করা হবে।
এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। তারা বলছেন, পরীক্ষা কবে হবে এমন উদ্বেগ কেটেছে। তবে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে মেডিকেল, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের স্বপ্ন দেখা শিক্ষার্থীদের।
সুমাইয়া রহমান রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমার জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক ছিল না। কিন্তু এবারে ভালো করতাম এই আশা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা যেহেতু হলো না, সেই আশা নষ্ট হলো। অনেক শিক্ষার্থী আমার থেকে খারাপ ফল করবার কথা। তারা আগের ফলাফলের কারণে এখন ভালো করে যাবে। তিনি আরো বলেন, তবে দীর্ঘদিন দোলাচলে থাকার চেয়ে একটা সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে আমি খুশি।
এবার প্রশ্ন উঠছে কীভাবে হবে ফলাফল? একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জেএসসি-এসএসসি পরীক্ষার প্রাপ্ত ফল গড়ের মাধ্যমে এইচএসসির গ্রেড দেয়ার কথা। তবে এই গড় প্রকাশের ক্ষেত্রে আরো কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একজন পরীক্ষার্থী যদি জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায় এবং এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪ পায় তাহলে তার গড় জিপিএ আসে ৪.৫। অর্থাৎ ওই পরীক্ষার্থীদের এইচএসসি পরীক্ষার গ্রেড হওয়ার কথা জিপিএ-৪.৫।
তবে এভাবে গড় করে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হবে না বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক। তিনি বলেন, আমরা পরীক্ষার্থীদের জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফল গড় করেই এইচএসসির গ্রেড দেব। তবে এটি স্বাভাবিক যে গড়ের হিসাব করা হয় যেভাবে সেভাবে করা হবে না। এর মধ্যে আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে। এটি আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করবো। সিদ্ধান্ত হলে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার মান সমান নয়। আর এ কারণেই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত গ্রেডের মান সমান ধরা হবে না। গ্রেড তৈরির ক্ষেত্রে জেএসসি থেকে কতটুকু ধরা হবে এবং এসএসসি পরীক্ষার গ্রেড থেকে কতটুকু নেয়া হবে- সেটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনেই করা হবে। তাছাড়া অন্যান্য অনেক বিষয় আনা হবে হয়তো। স্বাভাবিক যে গড়ের হিসাব করা হয়, এক্ষেত্রে সেই গড় হবে না।
এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল কীভাবে দেয়া হবে এ নিয়ে গতকাল আলোচনায় বসেছিলেন বোর্ড চেয়ারম্যানরা। সভার বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কায়সার আহমেদ বলেন, আমাদের সব বোর্ডের চেয়ারম্যানরা বসেছিলাম। এই নিয়ে আরো মিটিং হবে। মতামত নিয়ে একটা প্রেসক্রিপশন তৈরি করা হবে। এরপর এই নিয়ে কী সুবিধা-অসুবিধা থাকে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত জানানোর মতো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আমাদের কিছুটা সময় লাগবে।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আবুল কালাম আজাদ বিষয়টিকে খুবই জটিল বলে উল্লেখ বলেন, আমাদের গতকালকের (বৃহস্পতিবার) মিটিংয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। ফলাফল কীভাবে প্রকাশ হবে তা নিয়ে সমাধানের উপায় ভাবতে বলা হয়েছে। এখানে একটা বিষয় আছে নিয়মিত, অনিয়মিত, মান উন্নয়ন ও অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। এই নিয়ে একটি গাইডলাইন প্রস্তুতকরণের কাজ চলছে। বিষয়টি খুবই জটিল। মন্ত্রী মহোদয় যেহেতু ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল দেয়ার কথা বলেছেন সেহেতু এই সময় রেখা নিয়েই কাজ করছি। তবে এই বিষয়ে প্রথম দিনের মিটিংয়ে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়নি।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল আলীম বলেন, আমাদের আলোচনা মূলত ডাটা তৈরির নির্দেশনা নিয়ে। আমরা বিভিন্ন ভাগ করে ডাটাবেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনায় জানা যাবে কীভাবে কি করা যায়।