দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কিন্ডারগার্টেন প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর লেখাপড়ার মান তুলনা করে দেশের অনেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর সমালোচনা করেন কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান পার্থক্যের বিষয়টি সবাই সুকৌশলে এড়িয়ে যান।
আসুন এবার সে বিষয়টি আলোচনা করা যাক-
কিন্ডারগার্টেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ হচ্ছেন সচেতন এবং ধনী।অভিভাবকবৃন্দ তাদের সন্তানদের পিছনে প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করেন।এই ধনী ও সচেতন অভিভাবকবৃন্দের কাছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে গরীব শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় হিসেবে দেখার একটা প্রবৃত্তি কাজ করে।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে লক্ষ্য করলে দেখবেন সেখানে অনেক অভিভাবক নিজেই তাদের সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা করেন এবং বাসায় সন্তানদের নিজে পড়ানোর পাশাপাশি হাউজ টিউটর রেখে শিক্ষা দেন।অভিভাবকরা সবসময় শিক্ষার্থীর পড়াশুনার প্রতি নজর দেন।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের ডায়েরিতে শিক্ষকরা পড়া হলে টিক দেন,পরবর্তী দিনের বাড়ির কাজ দেন এবং পড়া না হলে ডায়েরীতে ক্রস চিহ্ন দেন।
অভিভাবক এবং হাউস টিউটর শিক্ষার্থীর সেই ডায়েরী দেখে বাসায় শিক্ষার্থীকে সেই পড়া আয়ত্ত করান।কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বইগুলো আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষা নীতিমালা অনুসরণ না করে নিজেদের মত করে চালানো হয়।
সারা বিশ্বে কোমলমতী শিশুদের যেখানো পড়াশুনার কোন চাপ দেয়া হয়না বরং বেশী বেশী খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের বিকশিত করার জন্য চেষ্টা চালানো হয়।
সেখানে আমাদের দেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে শুধু ভালো রেজাল্ট করানোর জন্য কঠিন কঠিন সেই বইগুলো পড়াশুনা করিয়ে শিক্ষার্থীদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেয়া হয় যা কোনভাবেই কাম্য নয়।দেশের শিক্ষাবিদরা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিষয়টি নিয়ে বারবার সতর্ক করছেন।
পক্ষান্তরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষার্থী পড়াশুনা করেন তাদের অভিভাবক হচ্ছেন চরম অসচেতন ও গরীব।তাদের সন্তানরা কোন ক্লাসে পড়েন এটাও অনেক অভিভাবক জানেন না,খোঁজও নেন না।
অনেক শিক্ষার্থী না খেয়েই স্কুলে চলে আসেন।ক্লাসে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর খাতা নেই, কলম নেই।
সরকার উপবৃত্তির যে টাকা দেয় সেই টাকা অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পড়াশুনার উপকরণ কিনে না দিয়ে নিজেদের সাংসারিক কাজে লাগান।শিক্ষার্থীদের প্রায় স্কুলে আসতে না দিয়ে অভিভাবকগণ বাড়ির ও মানুষের বাসায় কাজ করান।
শিক্ষক ক্লাসের মাত্র ৪০মিনিট সময়ে যা পড়ান শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবক বাসায় গিয়ে সেই পড়া একটুও অনুশীলন করেনা বা অনুশীলন করান না।
বাসায় গিয়ে অনুশীলন না করলে কোন শিক্ষকের ক্ষমতা নেই মাত্র ৩০/৪০মিনিট সময়ে ২০/৩০/৪০জন শিক্ষার্থীকে দক্ষ করে তোলা।কিন্ডারগার্টেন ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল পার্থক্যটা এবং সমস্যাটা এখানেই।
সর্বশেষ আরেকটি বিষয় জাতিকে স্মরণ করিয়ে না দিলেই নয় বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ মহামান্য রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে দেশে যত ছোটবড় কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশুনা করেই আজ প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে অধিষ্ঠিত।
অন্যদিকে দেশের বড় বড় শিক্ষাবিদরা আজ পর্যন্ত কেউ কিন্ডারগার্টেন স্কুলকে ভালো বলে স্বীকৃতি দেননি বরং শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রেসার দিয়ে তাদের সৃজনশীলতা নষ্ট করার জন্য কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে অভিযুক্ত করে এগুলো বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি বারবার অনুরোধ জানাচ্ছেন।
লেখক-মাহমুদ হোসেন,শিক্ষক।
আরো পড়ুন
স্কুলে ভর্তি,টিউশন,সেশন ফি,বেতন ও এসএসসি ফরম পূরণে গলাকাটা ফি আদায়
২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষা এপ্রিলে, জুনে হতে পারে এইচএসসি পরীক্ষা
আগামী ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে
বিভিন্ন ধরণের শিক্ষামূলক তথ্য পেতে ভিজিট করুন আমাদের শিক্ষা তথ্য ওয়েবসাইট এবং লাইক দিয়ে সাথে থাকুন আমাদের অফিসিয়াল শিক্ষা তথ্য ফেসবুক পেজের সাথে।
আজকাল চাকুরির পরীক্ষাগুলোতে মুখস্থ বিদ্যার ছড়াছড়ি সেজন্যই বোধকরি কিন্ডারগার্টেন উপযুক্ত। সরকার কোটি টাকা খরচ করে প্রাথমিক বিদ্যালয় করলেও সেখানে পড়ালেখা হচ্ছে না, নেই কোন তদারকী যা কিন্ডারগার্টেনে বিদ্যমান। কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকগন কোন ধরনের প্রশিক্ষন ছাড়া যেভাবে শিক্ষার্থীদের তৈরী করছে তা বিরল। বরং কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে সরকার সাপোর্ট দিলে তারা আরো ভালো করতে পারত। এটি আমার ব্যাক্তিগত অভিমত কারন আমি একজন কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু বলুন।
এ সব বাদ দেন স্যারেরা। বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বেশী ব্যবসা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে(মসজিদ বাদে)। মোড়ে মোড়ে মাদ্রাসা যেভাবে হচ্ছে তাতে খুব শিগগিরই উভয় স্কুলে বসে টিচারদের(self) মাছি মারা ছাড়া আর কোনো কাজ থাকবে না।
সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা চাই, তবে বানিজ্যিক হতে দেব না।