পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

করোনায় থমকে আছে পুরো দেশের  শিক্ষা ব্যবস্থা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন । জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস হলেও এখনও পরীক্ষা হচ্ছে না। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

তাদের কয়েকটি পরীক্ষা না হওয়ায় কোন চাকরির পরীক্ষা দেয়ার জন্য আবেদন করতে পারছেন না। পাশাপাশি সেশনজটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে । আজকে ২৭ অক্টোবর রোজ মঙ্গলবার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাতিল হয়েছিলো দুটি বোর্ড পরীক্ষা। সে সময় এটি ছিল আলোচিত বিষয়। এরপর দীর্ঘ সময় পর করোনায় বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করা হলো ।

সরকার পিইসি, জেএসসি বাতিলের পর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষাও বাতিল করেছেন । সর্বশেষ গত ২১শে অক্টোবর মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষাও না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আবারও বাড়ছে এটা অনুমান করা যাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সেদিন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ১৭ই মার্চ শুরু হয়ে কয়েক দফায় বাড়িয়ে সর্বশেষ ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। তাই নতুন করে আরো ছুটি বাড়াতে হবে। আগামী ২৯শে অক্টোবর এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়তে পারে, তবে কতদিন বাড়বে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে জানিয়ে দেয়া হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত আছেন । যারা স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে শেষ বর্ষে ছিল অথবা যারা শেষ বর্ষে পদার্পণ করেছেন তাদের অভিযোগ, তারা শুধুমাত্র কয়েকটি পরীক্ষা বাদ থাকার কারণে, সার্টিফিকেট নিতে পারছে না।

তাদের জুনিয়র ব্যাচদের ঠিকই ক্লাস হচ্ছে, ক্যাম্পাস খুললে পরীক্ষা দিতে পারবে। এর ফলে, সিনিয়র ব্যাচ ও জুনিয়র ব্যাচগুলোর মধ্যে খুব একটা পার্থক্য থাকবে না।

পাশাপাশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা না হলেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হচ্ছে। এর ফলে, বিশাল একটা ব্যবধানের তৈরি হতে পারে, সেশনজটের শঙ্কাও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব শিক্ষার্থীদের কয়েকগুণ হতাশা বেড়েছে ও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটছে।

জানা যায়, বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ৫টি পরীক্ষা হয়েছে, বাকি আছে ৪টি বিষয়ে। মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ৩টি করে পরীক্ষা বাকি হয়েছে। সকলের সাক্ষাৎকার ও ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকি আছে।

সম্প্রতি বিগত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশের দাবিতে এবং ‘অটোপাস’ চেয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনও করেন। সেইসঙ্গে করেন সড়ক অবরোধ।

এ মানববন্ধনে অংশ নেয়া চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী  রেজাউল ইসলাম বলেন, আমাদের দাবি একটাই কলেজ বন্ধ হওয়ার আগে চতুর্থ বর্ষের অনুষ্ঠিত ৫টি বিষয়ের পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে বাকি বিষয়ের ইনকোর্স পরীক্ষার নম্বর মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ করা হোক।

আরেক শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, আন্দোলনে মৌখিক ও বিজ্ঞান বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষার ক্ষেত্রেও আমরা গড় পদ্ধতি অনুসরণ করে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছি ।

তিনি আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনিশ্চয়তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসন ও শিক্ষার্থীদের চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার লক্ষ্যে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টির জন্য পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় ফলাফল দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

দিনাজপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস শান্তা বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভিসি স্যার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর আমাদের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলছেন।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষাবিহীন এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ফল প্রকাশের ব্যাপারে অদ্যাবধি কোনো সিদ্ধান্ত জানায় নি। এতে আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের আলহাজ মকবুল হোসেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লামিউল ইসলাম বলেন, বাকি পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি এবং অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আগের পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণপূর্বক অটোপাস দিয়ে দ্রুত ফল প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী  রবিউল ইসলাম নিরব বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যারের কাছে স্মারকলিপি দেই। এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তের কথা না জানানোয় গত সোমবার দেশের বিভিন্ন কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন।

জামালপুরের মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষার্থী খুশবু রহমান নিশি ইনকোর্স পরীক্ষার নম্বর যোগ দিয়ে তাদের ফল প্রকাশের দাবি জানান।

শুধু ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরাই নয়। অভিযোগের কথা জানান, অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীরাও। তারা বলছেন কোনো রকম ক্লাস চললেও নেই কোনো পরীক্ষা। কারমাইকেল কলেজ, রংপুরের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল চৌধুরী বলেন, আমাদের ক্লাস নিয়মিতই হচ্ছে। তবে জুম কিংবা অনলাইনে ফেস টু ফেস পরীক্ষা নেয়া হলে হয়তো কিছুটা উপকার হতো। আর ক্লাসে কোন এটেনডেন্স নেই,কোন অ্যাসাইন্টমেন্ট নেই।

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী তন্নি বলেন, এই ক্লাসে যদি উপস্থিতির বিষয় থাকতো তাহলেও একটা বিষয় থাকতো। যেহেতু উপস্থিতির কোনো বিষয় নেই সেহেতু তার ক্লাসের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে । তাই এটা একটা প্রসেস মাত্র।

৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, আপনি হাফওয়েতে এসে যদি আপনি বলেন পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হোক তবে অসম্পূর্ণ পরীক্ষা হবে। এই ফলাফল নিয়ে আপনি না পারবেন বিদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে। না পারবেন চাকরির জন্য এপ্লাই করতে। কারণ তারা জানবে আপনি সকল কোর্স সম্পন্ন করে আসেন নাই। এটা শিক্ষার্থীদের জন্য হিতে বিপরীত হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় সেশনজট ভয়াবহ ছিল। চার বছরের অনার্স কোর্স সাত বছর লাগতো। কিন্তু এখন তা লাগছে না। করোনা না হলে ২০১৯ সালের পরীক্ষা ২০১৯ সালেই হতো। করোনা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক হয় তবে এই সমস্যা সমাধানে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা ৩মাসের মধ্যে ফলাফল দেবো। শুধু সনদ দিয়ে কি হবে? যদি মানসম্মত শিক্ষা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, অটোপাসের বিষয়ে ভাবতে হবে। প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এক্ষেত্রে ইউজিসি বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।

কারণ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেমন তা সেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন। আর এ সময়টা যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমার মনে হয় না অটোপাস না দেয়াই ভালো।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)’র সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, কোন অবস্থাতেই অটোপাস সম্ভব না। আমরা এখনো এ বিষয়ে ভাবছি না। শিক্ষার্থীদের উচিত যথাযথভাবে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া।

Check Also

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

বিসিএসের প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে

‘বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে দেশের অন্যতম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর …

বই খুলে দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা,দুই কেন্দ্র সচিবসহ ৫ জন প্রত্যাহার

বই খুলে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজের দায়িত্বরত …

আপনার মতামত জানান