করোনার এই ছুটিতেও বাড়িতে বসে নেই প্রাথমিক শিক্ষকরা

গত ১৭মার্চ থেকে করোনার প্রকোপের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে সরকার।দীর্ঘ এই বন্ধে শুধু বসে বসে ছুটি কাটাচ্ছেন না প্রাথমিক শিক্ষকরা। ঘরে বসেই ২০ মার্চ থেকেই ফোনের মাধ্যমে শিশুদের খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রমও থেমে নেই,চলছে অবিরাম গতিতে।সংসদ টিভি,বেতারে পাঠদানের পাশাপাশি প্রত্যেকটি উপজেলায় অনলাইন স্কুল নামে ফেজবুক পেজ খুলে প্রতিনিয়নত পাঠদান করে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত বড় বড় ফেসবুক গ্রুপগুলোতে প্রতিদিন বিভিন্ন শিক্ষক লাইভে এসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন।

সম্প্রতি ফেনী,কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় প্রাথমিক শিক্ষকদের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা।তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়াশুনা,স্বাস্থ্যবিধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।দীর্ঘদিন পরে প্রিয় শিক্ষকদের কাছে পেয়ে শিক্ষারর্থীরাও বেজায় খুশি।শিক্ষকদের এমন কার্যক্রমে বেজায় খুশি প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ।

তারা বলছেন শিক্ষকরা বাড়িতে এসে আমাদের সন্তানদেরর খোঁজখবর নেয়ায় আমাদের সন্তানদের জন্য খুবই ভালো হয়েছে।তারা নতুন করে চাঞ্চল্যতা ফিরে পেয়েছে এবং পড়াশুনায়ও আগের থেকে মনোযোগী হয়েছে।এমনকি যেসব অভিভাবক প্রাথমিক শিক্ষকরা পড়ায়না বলে কথায় কথায় সমালোচনা করতেন তারাও করোনার প্রকোপে স্কুলগুলো বন্ধ হওয়ায় শিক্ষকদের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন।

আরো পড়ুন
অভিনব পন্থায় ইরানে ক্লাস নেয়া হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের
কাপড় ও টিফিনবক্স কিনতে শিক্ষার্থীদের ১ হাজার করে টাকা দেয়া হবে-প্রধানমন্ত্রী
প্রাথমিক শিক্ষকদের অনলাইন বদলী পরীক্ষামূলকভাবে চালু হচ্ছে চলতি মাসেই

খয়রুল নামে একজন অভিভাবক বলেন স্কুল বন্ধ থাকলে এবং শিক্ষকদের সংস্পর্শ না পেলে শিশুদের পড়াশুনায় এত আগ্রহ কমে যায়, তা করোনার প্রকোপ না হলে কোনদিন বুঝতেই পারতামনা।দীর্ঘদিন পরে শিক্ষকদের দেখে আমার সন্তান খুবই খুশি,শিক্ষকের বাড়িতে আগমনে ও (সন্তান)পড়াশুনায় মনোযোগীও হয়েছে।

সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী মৃদুলা  জানায়, স্যাররা বাড়ি আসায় আমি অনেক খুশি। স্যাররা আমাকে পড়ালেখা করার জন্য বলেছেন, অনেক কিছু শিখিয়ে গেছেন।

মৃদুলার বাবা নিখু চন্দ্র শীল বলেন, শিক্ষকরা বাড়ি আসায় অনেক উপকার হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা দীর্ঘদিন স্কুলে না যাওয়ায় তাদের মধ্য থেকে মনোযোগ হারিয়ে গিয়েছিল, শিক্ষকরা আসায় সে মনোযোগ ফিরে এসেছে। আর সে কারণেই বাচ্চারা আবার পড়ার টেবিলে বসতে আগ্রহী হচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হয় ফেনী সদর উপজেলার দমদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা শাহিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, হোমভিজিটে গিয়ে যে কয়টি বিষয়ে জোর দিয়েছি তাহলো শিক্ষার্থীদের নিজেকে ও পরিবারকে করোনামুক্ত রাখতে, তথা সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এটা মানার জন্য রেডিও, টিভি দেখতে বলা। যেহেতু স্কুলে লম্বা ছুটি চলছে তাই বাড়িতে পড়াশোনার ব্যাপারে অভিভাবকদের মূল ভূমিকা নেওয়া।

এছাড়া সংসদ টিভি দেখা, অনলাইন ক্লাসগুলো মনোযোগ সহকারে দেখার জন্য জোর দিয়ে বলি। এমনকি যাদের স্মার্টফোন নেই তাদের বাচ্চাদের সহযোগিতা করতে পাশের বাড়ির লোকদের অনুরোধ করি। কয়েকদিন পর পর অভিভাবকদের ফোনও করি। স্টুডেন্টদের সঙ্গেও কথা বলি।

এ বিষয়ে কথা হয় ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিও) নুরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ফেনীতে মোট ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এবং সবগুলো বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ফোনের মাধ্যমে তাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এড আছেন। শিক্ষকরা ঘরে বসে শিখি কার্যক্রমের আওতায় পাঠের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। যেসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ফোন নেই স্বাস্থ্যবিধির আলোকে মাস্ক পরে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষকরা খোঁজখবর নিচ্ছেন,শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলছেন।

নুরুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ স্কুল খুলে ফেললে আমরাতো শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে ফেলতে পারবো না। তাদের তৈরি রাখতে এ ধরনের কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির ফলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই শিখতে পারবেন।

Check Also

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

বিসিএসের প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে

‘বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে দেশের অন্যতম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর …

বই খুলে দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা,দুই কেন্দ্র সচিবসহ ৫ জন প্রত্যাহার

বই খুলে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজের দায়িত্বরত …

আপনার মতামত জানান